close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

অবশেষে সিটি করপোরেশনের মর্যাদা পাচ্ছে বগুড়া পৌরসভা

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
বগুড়া পৌরসভা অবশেষে সিটি করপোরেশনে রূপ নিতে যাচ্ছে। সব শর্ত পূরণ, গণশুনানি সম্পন্ন, প্রশাসক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু—বগুড়াবাসীর বহুদিনের স্বপ্ন এখন বাস্তবে রূপ নিচ্ছে।..

বগুড়াবাসীর বহু বছরের অপেক্ষা শেষ হতে চলেছে। প্রশাসনিক মর্যাদায় এক ধাপ এগিয়ে এবার সিটি করপোরেশন হিসেবে ঘোষণা পেতে যাচ্ছে বগুড়া পৌরসভা। জেলা প্রশাসনের সূত্র জানায়, চলতি সপ্তাহেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে সিটি করপোরেশন ঘোষণা ও প্রশাসক নিয়োগের প্রস্তাব পাঠানো হচ্ছে। বগুড়াকে ঘিরে এখন বইছে উত্তেজনা ও নতুন সম্ভাবনার হাওয়া।

সিটি করপোরেশন গঠনের শর্তগুলো পূরণ করেই এই ঘোষণা আসতে চলেছে। এর আগেই গণশুনানি, গণবিজ্ঞপ্তি, আবেদনপত্র জমা ও এলাকাভিত্তিক সীমানা নির্ধারণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা প্রক্রিয়াটিকে এবার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার জন্য প্রশাসনিক স্তরে জোর তৎপরতা শুরু হয়েছে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের সূত্র মতে, গত ২৭ এপ্রিল বগুড়ার জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজের নেতৃত্বে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। গণবিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, যদি কোনো আপত্তি বা সুপারিশ থাকে, তবে তা ৩০ দিনের মধ্যে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই সময়ের মধ্যেই জমা পড়ে বিভিন্ন প্রস্তাবনা।

নগর উন্নয়ন ফোরামের সদস্য অধ্যাপক আসম আব্দুল মালেক এবং বিএএফ শাহীন কলেজের পক্ষ থেকে মহানগর এলাকায় ৬টি ইউনিয়ন সংযুক্ত করে সীমানা পুনঃনির্ধারণ করার সুপারিশ পেশ করা হয়। ইউনিয়নগুলো হলো: সাবগ্রাম, রাজাপুর, নিশিন্দারা, এরুলিয়া, ফাঁপোড় ও আশেকপুর। এই এলাকাগুলো যুক্ত হলে বগুড়া সিটি করপোরেশনের আওতায় বিশাল একটি জনবসতি অন্তর্ভুক্ত হবে।

জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সিটি করপোরেশনে উন্নীত হওয়ার জন্য যেসব মানদণ্ড প্রয়োজন, বগুড়া পৌরসভা তার সবগুলোই পূরণ করেছে। পরবর্তী ধাপে প্রয়োজন কেবল সরকারি চূড়ান্ত সম্মতি ও গেজেট প্রকাশ। সেই লক্ষ্যে প্রশাসনিক দপ্তরে প্রস্তাব পাঠানোর কার্যক্রম প্রায় শেষের পথে।

এর আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসক সম্মেলনে বগুড়া জেলা প্রশাসক এই প্রস্তাব উত্থাপন করেন। সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা প্রস্তাবটিতে সম্মতি দেন এবং বগুড়াকে সিটি করপোরেশন ঘোষণা দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় আনার নির্দেশনা দেন।

বগুড়া পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সিপার আল বখতিয়ার বলেন, “দীর্ঘদিন বগুড়াবাসী উন্নয়ন বঞ্চনার শিকার হয়েছে। এবার সিটি করপোরেশনের ঘোষণা হলে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।” তিনি আরও বলেন, “ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর বগুড়ার মানুষ নতুন করে উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছে। বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় এলে এসব বাস্তবায়নের গতি আরও বাড়বে।”

সিটি করপোরেশন হলে নাগরিকদের জন্য উন্নত পানি সরবরাহ, আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পরিচ্ছন্ন নগর পরিবেশ, উন্নত রাস্তাঘাট, নিরাপত্তা, হোল্ডিং ট্যাক্সে স্বচ্ছতা, এবং শিক্ষা-স্বাস্থ্যসেবায় উন্নতি নিশ্চিত করা যাবে।

বগুড়া স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক এবং পৌরসভার প্রশাসক মাসুম আলী বেগ জানান, “সিটি করপোরেশন গঠনের ঘোষণা এবং গেজেট প্রকাশের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দ্রুত চিঠি পাঠানো হচ্ছে। আমরা প্রস্তুত।”

বগুড়া জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজ বলেন, “সিটি করপোরেশনের জন্য প্রয়োজনীয় সব শর্ত পূরণ করেছে বগুড়া। উন্নয়ন বাস্তবায়নে এই ঘোষণাই হবে বগুড়ার ভবিষ্যতের মাইলফলক।”

একসময় শুধুই স্বপ্ন ছিল—আজ তা বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে। বগুড়া পৌরসভা থেকে সিটি করপোরেশনে রূপান্তরের এই ঐতিহাসিক যাত্রা শুধু প্রশাসনিক পদক্ষেপ নয়, বরং গোটা উত্তরাঞ্চলের উন্নয়নের প্রতীক হয়ে উঠতে চলেছে। এখন বগুড়াবাসীর অপেক্ষা মাত্র একটি সরকারি গেজেট প্রকাশের।

Nema komentara