close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

অবৈধ মজুতের কারণে চালের দাম বাড়ছে

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
অবৈধ মজুতদার ও কর্পোরেট ব্যবসায়ীদের কারণে বোরো মৌসুমেও চালের দাম বাড়ছে দুই থেকে সাত টাকা; দামে অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছে সাধারণ ভোক্তা ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।..

গত কিছু সপ্তাহে হঠাৎ করেই রাজধানীসহ সারা দেশের বিভিন্ন হাটবাজারে চালের দাম ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিমাপ অনুযায়ী, সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি চালের দাম দুই থেকে সাত টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এই বোরো মৌসুমে, যেখানে নতুন ধানের সরবরাহ শুরু হওয়ার কথা, সেখানে এই দাম বৃদ্ধি অনেককে ভাবিয়ে তুলেছে। কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ায় এবং চালের বাজারে মজুতদারদের দাপটে ভোক্তারা এখন অতিরিক্ত খরচে পড়ছেন।

সরকারের মজুত নীতিমালা উপেক্ষা করে অসাধু ব্যবসায়ী ও কর্পোরেট সংস্থাগুলো বেশি পরিমাণ ধান ক্রয় করে মজুত করছেন। এতে সাধারণ মিলারদের হাতে কৃষকের ধান পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে। বৈরী আবহাওয়া ও চাতালে ধান শুকানোর অনুপযোগী পরিবেশও চাল উৎপাদন ও সরবরাহে প্রভাব ফেলছে।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে মোটা চালের দাম এখন ৫২ থেকে ৬০ টাকা, মাঝারি মানের চাল ৫৬ থেকে ৬৫ টাকা এবং সরু চালের দাম ৭০ থেকে ৮২ টাকা পর্যন্ত উঠে গেছে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের শেরপুর অঞ্চলে ধানের দাম দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতি বস্তায় (৫০ কেজি) ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই অবস্থায় নিম্ন আয়ের মানুষ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা দারুণ সংকটে পড়েছেন।

শেরপুরের একটি রাইসমিল মালিক আইয়ুব আলী জানান, "বর্তমানে আবহাওয়ার কারণে ধান শুকানো যাচ্ছে না, ফলে চালের উৎপাদন ও সরবরাহ কম। কর্পোরেট কোম্পানি ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা চাল কিনে মজুত শুরু করেছেন, যা দামের বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ।"

নওগাঁ জেলা থেকেও একই চিত্র দেখা গেছে। নওগাঁর বিভিন্ন পাইকারি বাজারে চালের দাম দুই থেকে সাত টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। পাইকারি পর্যায়ে জিরাশাইল চাল ৬৫-৬৬ টাকা থেকে বেড়ে ৭০-৭২ টাকা, কাটারি চাল ৭০-৭২ টাকা থেকে ৭৫-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধি নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতাকে নাজুক করে তুলেছে।

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, মজুতদার ও সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে স্বাভাবিক প্রতিযোগিতা নেই। এক শ্রেণির বড় ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছ থেকে বেশি দামে ধান কিনে মজুত করছেন। তাদের হাতে কৃষকের সরাসরি ধানের বিক্রয় কমে যাওয়ায় বাজারে চালের সরবরাহ সংকুচিত হচ্ছে।

নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন বলেন, "চালের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে, কারণ কৃষকদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে ধান কিনতে হচ্ছে। এছাড়া কর্পোরেট ব্র্যান্ডিং কোম্পানির কারণে দাম বাড়ছে।"

নওগাঁ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল জানিয়েছেন, "চালের দাম বৃদ্ধির কারণ তদন্তের জন্য খাদ্য কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেউ যদি অবৈধভাবে চালের দাম বাড়ায়, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"

সরকারের ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ও বিভিন্ন বাজারের পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট হয়েছে যে, চালের দাম বৃদ্ধির মূল কারণ মজুতদারদের অবৈধ কার্যক্রম এবং কর্পোরেট ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত ক্রয়। বর্তমানে বোরো মৌসুম হওয়া সত্ত্বেও বাজারে ধানের সঠিক সরবরাহ না হওয়ায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে দ্রুত ও কঠোর পদক্ষেপ না নিলে নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা সংকটগ্রস্ত হতে পারে। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর প্রতি আহ্বান, তারা যেন অবিলম্বে অবৈধ মজুত ও সিন্ডিকেট বিরোধী অভিযান শুরু করে চালের বাজারকে স্থিতিশীল করে তোলেন।

এই মুহূর্তে দেশের প্রতিটি হাট-বাজারে চালের দাম নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং মজুতদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়া চালের দাম নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। সাধারণ মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যের বাজারে দামের এমন ঊর্ধ্বগতি দীর্ঘস্থায়ী হলে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে বড় ধরনের সংকট দেখা দেবে।

সার্বিকভাবে বলা যায়, দেশের খাদ্যবস্তুর বাজারে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে মজুতদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি, নতুবা চালসহ অন্যান্য খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে, যা দেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের জীবনযাত্রাকে আরও দুর্বিষহ করে তুলবে।

Walang nakitang komento