close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

অ'বৈ'ধ সুবিধা গ্রহণের অভিযোগে এনসিপি নেতাকে অ'ব্যা'হতি..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
নিজেকে প্রতিষ্ঠাতা পরিচয় দিয়ে অবৈধ সুবিধা নেওয়া, ফ্যাসিস্ট ঘরানার নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা—এসব অভিযোগে এনসিপির সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নেতা জিকোকে অব্যাহতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সংগঠনের নীতিবিরুদ্..

সুন্দরগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা জিকোর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগে সাংগঠনিক পদ থেকে অব্যাহতি

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা রাজনীতিতে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) স্থানীয় সংগঠক আল-শাহাদাৎ জামান জিকোকে কেন্দ্র করে। সংগঠনের ব্যানার ব্যবহার করে একাধিক জায়গায় প্রভাব খাটানো এবং সংগঠনের আদর্শবিরোধী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে তাকে এনসিপির সকল প্রকার কার্যক্রম থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

রোববার (২৫ মে) দুপুরে এনসিপির কেন্দ্রীয় সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) নাজমুল হাসান সোহাগ এ তথ্য গণমাধ্যমে নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, “সুন্দরগঞ্জ উপজেলার এনসিপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা ও পর্যালোচনার পর সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। দলীয় শৃঙ্খলা ও আদর্শ রক্ষার্থে আমরা কোনো আপস করব না।”

অভিযোগের গভীরতা: ক্ষমতার অপব্যবহার ও আদর্শবিরোধী সংশ্লিষ্টতা

আল-শাহাদাৎ জামান জিকোর বিরুদ্ধে অভিযোগ শুধু সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে ব্যক্তিস্বার্থে প্রভাব বিস্তারেই সীমাবদ্ধ নয়। জানা গেছে, তিনি নিজেকে এনসিপির উপজেলা পর্যায়ের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিচয় দিয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও বিভিন্ন দপ্তরে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেন। সামাজিকভাবে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি অভিযোগ রয়েছে—তিনি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কিছু বিতর্কিত নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলেন এবং তাদের ছত্রছায়ায় এনসিপির আদর্শবিরোধী কাজেও জড়িত হন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘জুলাই যোদ্ধারা’ নামে একটি প্রগতিশীল গোষ্ঠী তাকে দলের আদর্শবিরোধী এবং শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি অসম্মানজনক মন্তব্য করে এনসিপি থেকে বহিষ্কারের দাবি তোলে। এনসিপির মূল চেতনার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া একজন নেতাকে সংগঠনে রাখা যায় না বলেও তারা মন্তব্য করেন।

কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত: শৃঙ্খলা রক্ষায় আপসহীনতা

পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে এনসিপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা আলোচনায় বসেন এবং সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেন—আল-শাহাদাৎ জামান জিকোকে সংগঠনের সকল কার্যক্রম থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় সংগঠক নাজমুল হাসান সোহাগ বলেন, “সংগঠনের আদর্শ, নীতি ও শৃঙ্খলা রক্ষায় কেউ যদি নিয়ম ভঙ্গ করে, তবে তার বিরুদ্ধে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব।”

তিনি আরও বলেন, “সংগঠনের অবস্থান পরিষ্কার—আমরা কোনো নেতার ব্যক্তি পরিচয় বা রাজনৈতিক অতীত দেখে নয়, তার বর্তমান কর্মকাণ্ড এবং দলীয় আদর্শে তার বিশ্বাসকে গুরুত্ব দিই।”

জিকোর রাজনৈতিক যাত্রা: দল বদলের ইতিহাস ও প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থান

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আল-শাহাদাৎ জামান জিকোর রাজনৈতিক জীবনের শুরু হয় বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদলের মাধ্যমে। সেসময় তিনি উপজেলা ছাত্রদলের এক নেতার অনুপ্রেরণায় রাজনীতিতে যুক্ত হন। তবে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর জিকোর রাজনৈতিক অবস্থানে আসে নাটকীয় পরিবর্তন। তিনি যুবলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করেন এবং জেলা যুবলীগের সভাপতি সরদার সাঈদ হাসান লোটনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলেন।

তবে স্থানীয় আওয়ামী রাজনীতিতে জিকোর গ্রহণযোগ্যতা কখনোই নিশ্চিত ছিল না। বরং তার অবস্থান নিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রশ্ন ছিল অনেক আগ থেকেই। তার এমন অবস্থান এবং বারবার দলবদলের প্রবণতা এনসিপির শীর্ষ নেতৃত্বের কাছেও সন্দেহের জন্ম দেয়।

দলীয় সংকেত স্পষ্ট: আদর্শের প্রশ্নে কোনো ছাড় নয়

এনসিপি তার সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সংগঠনের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষা এবং আদর্শবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার বার্তা দিয়েছে। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যেখানে বহু সংগঠন আদর্শের জায়গা থেকে বিচ্যুত হচ্ছে, সেখানে এনসিপির এই পদক্ষেপকে ইতিবাচক বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এই ঘটনা দলীয় ভেতরের আত্মবিশ্লেষণের একটি ইঙ্গিতও বটে—যেখানে সদস্যদের ব্যক্তিগত অবস্থান নয়, বরং আদর্শিক নিষ্ঠা এবং শৃঙ্খলাবোধকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

Tidak ada komentar yang ditemukan