নুসরাত ফারিয়াকে নিয়ে পিনাকীর বিস্ফোরক পোস্ট: ‘হাসিনা হতে চাওয়াটাই অপরাধ!’
জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও গায়িকা নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তারের খবরে যেখানে ভক্তরা হতবাক, ঠিক তখনই সামাজিক মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে চরম বিতর্ক তৈরি করেছেন প্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসক, লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক পিনাকী ভট্টাচার্য। সোমবার (১৯ মে) সন্ধ্যায় দেওয়া এক ফেসবুক পোস্টে তিনি নুসরাত ফারিয়ার রাজনৈতিক মনোভাব এবং অতীত বক্তব্য নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন।
পিনাকীর ভাষায়, “নুসরাত ফারিয়ার হাসিনা হয়ে উঠতে চাওয়াটাও অপরাধ।”
তিনি আরও বলেন, “নুসরাত ফারিয়া নিজেই এক সময় বলেছিলেন তিনি শেখ হাসিনার মতো হতে চান। এমনকি এমনও বলেছিলেন, শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয়ের পর যদি জীবনে আর কোনো চরিত্রে অভিনয় না করতে হয়, তাতেও তার কোনো আফসোস থাকবে না।”
পিনাকীর বক্তব্য অনুসারে, এটি একজন অভিনেত্রীর সাধারণ বক্তব্য নয়, বরং এটা তার রাজনৈতিক অবস্থান এবং ক্ষমতাসীন দলের প্রতি তার আনুগত্য প্রকাশ করে। তার ভাষায়, “এটা অভিনেত্রীর বয়ান নয়, বরং তার পর্দা ইমেজকে একজন ফ্যাসিস্টের পদতলে অর্ঘ্য দেওয়া।”
রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ ও আওয়ামী সংযোগ নিয়ে অভিযোগ
পিনাকী আরও দাবি করেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী আসনের মনোনয়ন পেতে গণভবনে হাজির ছিলেন নুসরাত ফারিয়া। এমনকি তিনি প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের প্রেমিকা হিসেবেও পরিচিত। তিনি মন্তব্য করেন, “একজন ফ্যাসিস্ট এনেবেলার, আওয়ামী পাওয়ার সার্কেলের গুরুত্বপূর্ণ মক্ষিরানীকে গ্রেপ্তার করাটা সরকারের জরুরি দায়িত্ব। তার কাছ থেকে ফ্যাসিস্ট জামানার অনেক কিছু জানার আছে।”
তার মতে, “একজন হাসিনা হয়ে উঠতে চাওয়াটাই অপরাধ, এবং তার মানসিক চিকিৎসা করাও জরুরি।”
রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ আরও জোরালো
নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তারের পেছনে শুধু রাজনৈতিক সংযোগই নয়, আরও গভীর অভিযোগের কথাও সামনে এসেছে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক জানিয়েছেন, ছাত্র আন্দোলনের সময় নুসরাত ফারিয়ার বিরুদ্ধে ছাত্রদের বিরোধিতা ও উস্কানি দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, “এ ধরনের ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে এবং তার ভূমিকা স্পষ্ট।”
সোমবার আদালতে হাজিরের পর শুনানি শেষে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
উল্লেখ্য, তার বিরুদ্ধে ভাটারা থানায় দায়ের হওয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকেন্দ্রিক একটি হত্যাচেষ্টা মামলার শুনানি চলছিল। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতেই তাকে আদালতে হাজির করা হয় এবং শুনানি শেষে গ্রেপ্তারাদেশ জারি করা হয়।
সমালোচনা ও জনমত বিভাজন
এই ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নুসরাত ফারিয়াকে ঘিরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকে তাকে ‘ক্ষমতালোভী’ বলে সমালোচনা করছেন, আবার অনেকেই বলছেন, একজন শিল্পীর রাজনৈতিক মত থাকতেই পারে। তবে পিনাকীর এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে ফারিয়ার চরিত্র ও অবস্থান নিয়ে জনমনে প্রশ্নের ঝড় উঠেছে।
নুসরাত ফারিয়া এই বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া দেননি। তবে তার আইনজীবী জানিয়েছেন, এই গ্রেপ্তার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং এর পেছনে রাজনৈতিক মোটিভ রয়েছে।
শেষকথা
নুসরাত ফারিয়া যে শুধু অভিনয়েই নয়, রাজনৈতিক অঙ্গনেও নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন, তা আর গোপন নেই। তবে তার সেই উচ্চাভিলাষই আজ তাকে আইনের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে কিনা—তা নিয়ে চলছে তুমুল বিতর্ক। পিনাকীর মতো ব্যক্তির প্রকাশ্য সমালোচনা আরও প্রমাণ করে, এ ঘটনা কেবল একজন শিল্পীর ব্যক্তিগত সংকট নয়—বরং এর পেছনে জড়িয়ে আছে বৃহত্তর রাজনৈতিক চিত্র।
এখন দেখার বিষয়, নুসরাত ফারিয়া নিজেকে কীভাবে এই বিপদসংকুল পরিস্থিতি থেকে বের করে আনেন এবং ভবিষ্যতে তার ক্যারিয়ার ও ভাবমূর্তি কতটা রক্ষা করতে পারেন।
