নরওয়ের রাজপরিবারে বড় ধরনের কেলেঙ্কারির সৃষ্টি হয়েছে। ভবিষ্যৎ রাজা হিসেবে বিবেচিত যুবরাজ হাকনের সৎ ছেলে মারিয়াস বোর্গ হোইবির বিরুদ্ধে ধর্ষণসহ ২৩টি ভয়াবহ অভিযোগ এনেছে দেশটির পুলিশ। এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে তিনটি ধর্ষণ, একাধিক যৌন নিপীড়ন এবং সহিংসতার ঘটনা।
বিবিসি সূত্রে জানা গেছে, ২৮ বছর বয়সী মারিয়াসকে গত বছর তিনবার গ্রেফতার করা হয়েছিল। এরপর ১০ মাসব্যাপী তদন্তের পর অবশেষে মামলাটি প্রসিকিউটরের কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রসিকিউটররাই এখন সিদ্ধান্ত নেবেন, মামলাটি আদালতে গড়াবে কি না।
অসলো জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা বিপুল সংখ্যক সাক্ষীর সাক্ষাৎকার গ্রহণ, আলামত তল্লাশি এবং বহু ডিজিটাল তথ্য বিশ্লেষণ করে মামলার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত সম্পন্ন করেছে। যদিও কিছু যৌন অপরাধ সংক্রান্ত অভিযোগ আইনি সীমাবদ্ধতা ও পর্যাপ্ত প্রমাণের অভাবে বাতিল করে দেওয়া হয়েছে, তবুও সংখ্যাটি এতটাই বড় যে তা সমাজে আলোড়ন তুলেছে।
পুলিশ অ্যাটর্নি আন্দ্রেয়াস ক্রুসজেউস্কি বলেন, “অভিযোগগুলো এত বিস্তৃত এবং বহুজনকে জড়িত করা হয়েছে যে প্রকৃত ভুক্তভোগীর সংখ্যা এখনই নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। তবে এটুকু বলা যায়, সংখ্যাটি দুই অঙ্কের।”
মারিয়াসের আইনজীবী পেটার সেকুলিক এক বিবৃতিতে বলেন, “আমার মক্কেল এই অভিযোগগুলো অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছেন। তবে অধিকাংশ অভিযোগেই তিনি দায় অস্বীকার করেছেন। বিশেষ করে যৌন সহিংসতার বিষয়গুলোতে তিনি সম্পূর্ণভাবে নিজেকে নির্দোষ দাবি করছেন।”
মারিয়াস বোর্গ হোইবি রাজপরিবারের সদস্য হলেও তার কোনো রাজকীয় পদবি বা সরকারি দায়িত্ব নেই। তিনি যুবরাজ হাকনের স্ত্রী, ক্রাউন প্রিন্সেস ম্যেট-মারিটের প্রথম পক্ষের সন্তান।
গত বছর এক হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে তাকে প্রথম গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর থেকেই তার বিরুদ্ধে একে একে বিভিন্ন অভিযোগ উঠে আসতে থাকে। পুলিশ জানায়, তদন্তে এমন বহু নারীর অভিযোগ সামনে এসেছে, যারা হোইবির বিরুদ্ধে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন।
তবে রাজপরিবার এ বিষয়ে নিজেদের সম্পূর্ণরূপে দূরে রাখার চেষ্টা করছে। নরওয়ের রয়েল হাউস থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, “এই মুহূর্তে একটি আইনি প্রক্রিয়া চলছে। তাই আমরা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবো না।”
সাধারণত ইউরোপীয় রাজপরিবারগুলোতে এধরনের ঘটনা অত্যন্ত দুর্লভ এবং স্পর্শকাতর হিসেবেই বিবেচিত হয়। ফলে নরওয়ের গণমাধ্যম ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, যদিও মারিয়াসের উপর কোনো রাজকীয় দায়িত্ব নেই, তবুও এই মামলার প্রভাব রাজপরিবারের ভাবমূর্তির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। একইসঙ্গে এটি নরওয়ের রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিবেশেও আলোড়ন তুলবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।