শুধু ভালো প্রকৌশলী হলেই চলবে না, ভালো মানুষ হতে হবে—এমন আহ্বান জানালেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। এমআইএসটি সম্মেলনে তাঁর বক্তব্যে উঠে এলো নৈতিক শিক্ষার গুরুত্ব।
শুধু পেশাগত দক্ষতাই নয়, একজন প্রকৌশলী কিংবা যেকোনো পেশার মানুষের আসল পরিচয় তার নৈতিকতা ও মানবিক গুণাবলির মধ্যে লুকিয়ে থাকে—এই বার্তাই উঠে এসেছে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের বক্তব্যে।
শনিবার (১৯ জুলাই) মিরপুর সেনানিবাসে অবস্থিত মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি)-তে অনুষ্ঠিত 'মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অ্যাপ্লাইড সায়েন্স' বিষয়ক তৃতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন—“শুধু ভালো প্রকৌশলী তৈরি করলেই হবে না, আমাদের ভালো মানুষও তৈরি করতে হবে। একজন ভালো মানুষ তৈরিতে একটি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
সেনাপ্রধান স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “শিক্ষিত, দক্ষ এবং প্রতিভাবান লোকের অভাব নেই দেশে। কিন্তু যদি তারা নৈতিক শিক্ষায় গড়ে না ওঠে, যদি তাদের ভিতরে শৃঙ্খলা, সততা ও দায়বদ্ধতা না থাকে, তবে তারা দেশের প্রকৃত উপকার করতে পারবে না।”
তিনি আরও বলেন, “একজন প্রকৌশলী যখন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে, চিকিৎসক যখন রোগীর জীবন রক্ষা করে, প্রশাসক যখন রাষ্ট্র পরিচালনায় দায়িত্ব পালন করে—তখনই তাদের ভেতরে থাকা মানবিক মূল্যবোধই তাকে ব্যতিক্রম করে তোলে। আর এই মূল্যবোধ গড়ে তোলা সম্ভব কেবল নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে।
জেনারেল ওয়াকার বলেন, “আমি সবসময় তরুণ প্রজন্মকে ভালো মানুষ হওয়ার জন্য উৎসাহিত করি। শৃঙ্খলা, সততা ও মমতাবোধ থাকলেই আপনি হবেন এই দেশের গর্বিত নাগরিক। আর আপনার মেধা আপনাকে করবে একজন অসাধারণ প্রকৌশলী।”
তিনি বলেন, এই আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুধু একাডেমিক আলোচনা নয়, বরং এটি একটি বৈচিত্র্যময় প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে, যেখানে বিশ্বজুড়ে গবেষক ও শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেছেন। এতে যেমন প্রযুক্তিগত নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এসেছে, তেমনি ভবিষ্যতের সম্ভাবনার দুয়ারও উন্মুক্ত হয়েছে।
সেনাপ্রধান আরও বলেন, “এই সম্মেলন কেবল আলোচনার নয়, এটি একটি সেতুবন্ধন। যেখানে ভবিষ্যতের গবেষণা, উদ্ভাবন ও যৌথ কাজের ভিত্তি রচিত হয়েছে। এটি আপনাদের চিন্তা, দৃষ্টিভঙ্গি এবং কর্মক্ষমতাকে আরও প্রসারিত করেছে।
সমাপনী বক্তব্যে তিনি অংশগ্রহণকারী সকল প্রতিনিধিদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান এবং বলেন, “আপনাদের আন্তরিকতা, আগ্রহ এবং জ্ঞানের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করছি। ভবিষ্যতে আপনাদের আবার স্বাগত জানানোর প্রত্যাশা রাখছি।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে সেনাপ্রধান বলেন, “সীমাবদ্ধতাকে ভয় নয়, বরং তা ভেঙে সামনে এগিয়ে চলার সময় এখন। জিজ্ঞাসু মানসিকতা ও উদ্ভাবনী চিন্তাই আপনাদের এগিয়ে নিয়ে যাবে। এই সম্মেলন আপনার জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ সোপান হয়ে থাকবে—এই অভিজ্ঞতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করুন।”