নওগাঁর ২১৩টি স্কুল ও মাদরাসা থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় একজনও পাশ করেনি। এমপিওভুক্ত এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যর্থতায় শিক্ষা ব্যবস্থার মান নিয়ে শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা।
নওগাঁ জেলার শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্নের মুখে পড়েছে স্থানীয় প্রশাসন ও অভিভাবক সমাজ। ২০২৫ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জেলার মোট ২১৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো শিক্ষার্থীই পাশ করতে পারেনি। এই বিপর্যয়কর ফলাফলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মান, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর আন্তঃসম্পর্ক এবং এমপিওভুক্তির কার্যকারিতা।
নওগাঁ জেলায় মোট ৭৭৩টি মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় এক-চতুর্থাংশ প্রতিষ্ঠান থেকে একজন শিক্ষার্থীও পাশ করতে না পারা অভিভাবকদের মনে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, এসব প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগই এমপিওভুক্ত এবং মাদরাসা, যেখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম, আবার শিক্ষার মান নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন।
জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সদর উপজেলা থেকে ৭৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯টিতে, মহাদেবপুরে ৮১টির মধ্যে ৩২টিতে, বদলগাছীতে ৫৪টির মধ্যে ৫টিতে, ধামইরহাটে ১১টি, পত্নীতলায় ৩৭টি, সাপাহারে ১২টি, পোরশায় ২৪টি, নিয়ামতপুরে ২৫টি, মান্দায় ৩০টি, রাণীনগরে ৮টি এবং আত্রাইয়ে ২০টি প্রতিষ্ঠান থেকে কেউ পাশ করেনি।
শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুধু ফল খারাপ হলেই প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর দোষ চাপিয়ে দায় এড়ানো উচিত নয়। বরং দীর্ঘদিনের শিক্ষা ব্যবস্থার গলদ, দুর্বল শিক্ষক প্রস্তুতি এবং প্রশাসনিক তদারকির ঘাটতিই এর মূল কারণ। বিশেষ করে, গত সরকারগুলোতে শিক্ষার্থীদের অতি নম্বর প্রদান ও পাশ করানোর প্রবণতা তাদের পড়ালেখা বিমুখ করেছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী নম্বর প্রদানে স্বচ্ছতা আসায় প্রকৃত অবস্থা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
নওগাঁ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শাহাদাৎ হোসেন জানান, "বিগত সময়ে অতিরিক্ত নম্বর দেওয়ার সংস্কৃতির ফলে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া থেকে আগ্রহ হারিয়েছিল। এখন সে সুযোগ না থাকায় প্রকৃত ফলাফল অনেক প্রতিষ্ঠানের বেহাল অবস্থাকে সামনে এনেছে।"
তিনি আরও জানান, যেসব প্রতিষ্ঠানে একটিও পরীক্ষার্থী পাশ করেনি, সেগুলোর বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। এমপিও নীতিমালার আওতায় প্রতিষ্ঠানগুলোর এমপিও স্থগিত বা বাতিল হওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
জনবল কাঠামো অনুসারে, প্রতিটি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট সংখ্যক শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করাতে হবে এবং একটি গ্রহণযোগ্য পাসের হার বজায় রাখতে হবে। তা না হলে প্রতিষ্ঠানটি এমপিও সুবিধা থেকে বাদ পড়তে পারে।
অভিভাবকরা বলছেন, প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত থাকলেও মানসম্মত শিক্ষক ও নিয়মিত পাঠদান না থাকলে এমন ব্যর্থতা অব্যাহত থাকবে। সরকারের উচিত কঠোর নজরদারি চালানো এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।
নওগাঁর এই ফলাফল শুধু একটি জেলার নয়, বরং জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার কাঠামো নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন তুলেছে। এটি ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষা খাতকে ঢেলে সাজানোর একটি সংকেত হতে পারে—যদি এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।