নোবেল পুরস্কারের জন্য ট্রাম্পের নাম সুপারিশ করলেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান, দাবি হোয়াইট হাউসের..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ভারত-পাকিস্তানের সম্ভাব্য যুদ্ধ থামানোর জন্য ট্রাম্পের অবদানকে স্বীকৃতি জানিয়ে শান্তির নোবেল পুরস্কারের জন্য তার নাম প্রস্তাব করেছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির। তবে ভারত দাবি করছে, এই শান্তি চে..

আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে চমক জাগানো এক নতুন মোড়—যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার জন্য সরাসরি সুপারিশ করেছেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আসিম মুনির। যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউস এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানায়, হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে এক বৈঠকে জেনারেল মুনির দাবি করেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সাম্প্রতিক পারমাণবিক উত্তেজনা প্রশমনে ট্রাম্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। সেই কৃতিত্বের জন্যই তিনি ‘শান্তির দূত’ হিসেবে ট্রাম্পের নাম শান্তি পুরস্কারের তালিকায় দেখতে চান।

হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র আনা কেলি এক বিবৃতিতে বলেন, “গত মাসে ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনা পারমাণবিক যুদ্ধ পর্যন্ত গড়াতে পারত। কিন্তু সেই পরিস্থিতিতে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভূমিকা ছিল গঠনমূলক। তিনি যুদ্ধ নয়, শান্তি বেছে নিয়েছেন—এ জন্যই জেনারেল মুনির শান্তি পুরস্কারের জন্য তার নাম প্রস্তাব করেন।”

তবে এই দাবির বিপরীতে ভারতের অবস্থান একেবারেই আলাদা। নয়াদিল্লির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ইসলামাবাদের সঙ্গে সাম্প্রতিক উত্তেজনার সময় যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনো তৃতীয় পক্ষের কোনো মধ্যস্থতা ছিল না। বরং ভারত এককভাবে কূটনৈতিক ও প্রতিরক্ষা নীতির ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিয়েছে।

২২ এপ্রিল কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার জবাবে ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরে একাধিক সামরিক আঘাত হানে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ইসলামাবাদের নূর খান বিমানঘাঁটিতে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। এরপর ১০ মে দুই দেশের সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে যোগাযোগ শুরু হয় এবং মৌখিক যুদ্ধবিরতির ভিত্তিতে উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হয়।

এই পটভূমিতেই ট্রাম্প ও মোদির মধ্যে ৩৫ মিনিটের ফোনালাপ হয়। তবে মোদি স্পষ্ট করে বলেন, তাদের আলোচনায় ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক নয়, বরং "অপারেশন সিঁদুর" এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে কথা হয়েছে। ট্রাম্প যদিও আবারও দাবি করেছেন, তিনিই দুই দেশের মধ্যকার সম্ভাব্য যুদ্ধ ঠেকিয়েছেন।

ট্রাম্প বলেন, “আমি পাকিস্তানকে ভালোবাসি। মোদিকে শ্রদ্ধা করি। গতরাতে তার সঙ্গে কথা হয়েছে। আমরা বড় একটি বাণিজ্য চুক্তির পথে আছি। কিন্তু এর চেয়েও বড় কথা—আমি যুদ্ধ থামিয়েছি।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, “আমি পারমাণবিক যুদ্ধ থামালাম, অথচ সংবাদমাধ্যম এক লাইনও লেখেনি! কেউ জানলো না! কিন্তু সমস্যা নেই, মানুষ জানে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এসব দাবি মূলত তার আসন্ন নির্বাচনী প্রচারের কৌশলের অংশ। তিনি নিজেকে একজন ‘শান্তির স্থপতি’ হিসেবে তুলে ধরতে চাইছেন। এর আগেও তিনি ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখিয়ে বলেছিলেন, “যেভাবে আমি ভারত-পাকিস্তানকে চুক্তিতে এনেছিলাম, তেমনটাই ইরান-ইসরায়েলও পারবে।

তবে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—ট্রাম্পের এই শান্তি প্রচেষ্টাগুলো আদৌ নোবেল পুরস্কারের যোগ্য কি না? কারণ, নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয় মূলত চারটি ক্ষেত্রে: অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ, মধ্যস্থতাকারী ভূমিকায় সফলতা, মানবাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, এবং বৈশ্বিক শান্তি প্রচার।

এই মাপকাঠিতে ট্রাম্পের দাবি কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নির্ধারণ করবেন নোবেল কমিটি। তবে নিশ্চিতভাবে বলা যায়—এই মনোনয়ন নিয়ে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে নতুন বিতর্ক ও আলোচনার জন্ম হয়েছে।

ট্রাম্প নোবেল পাবেন কি না, তা সময় বলবে। তবে এ ঘটনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এক নতুন নাটকীয়তা তৈরি হয়েছে, যার প্রভাব পড়তে পারে ভবিষ্যতের ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণে।

No comments found