close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

নো ইস্যু, পারফেক্ট কোয়ালিটি, বাংলাদেশের আম নিয়ে চীনা কর্মকর্তাদের সরাসরি মূল্যায়ন..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
বাংলাদেশের আম এবার সরাসরি পাড়ি জমালো চীনের বাজারে। চীনা কাস্টমস কর্মকর্তারা বললেন, “নো ইস্যু, পারফেক্ট কোয়ালিটি।” এই সাফল্য শুধু কৃষিতে নয়, বরং বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের এক নতুন দিগন্তের সূচনা।..

বাংলাদেশের কৃষিখাতে নতুন এক ইতিহাস রচনা হলো। দেশের অন্যতম প্রধান ফল আম এবার সরাসরি পৌঁছে গেল বিশ্বের অন্যতম বড় বাজার চীনে, যেখানে কাস্টমস কর্মকর্তারা রীতিমতো মুগ্ধ হয়ে মন্তব্য করলেন—“নো ইস্যু, পারফেক্ট কোয়ালিটি।”

এই প্রশংসা শুধু আমের মান নয়, বরং বাংলাদেশের কৃষিপণ্য রপ্তানির সক্ষমতা ও আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার প্রমাণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, এটি কেবল বাণিজ্যিক সাফল্য নয়, বরং বাংলাদেশ-চীন কূটনৈতিক সম্পর্কে এক নতুন মোড়।

 

এবারের সরাসরি রপ্তানির মাধ্যমে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাগান থেকে তোলা তিন টন উন্নত মানের আম চীনের হুনান প্রদেশের রাজধানী চাংশা শহরে পৌঁছায়। হুয়াংহুয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর এক মিনিটের মধ্যেই কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সম্পন্ন হয়, যা চীনা প্রশাসনের সহযোগিতা এবং বাংলাদেশের প্রস্তুতির নিখুঁত সমন্বয়ের ইঙ্গিত দেয়।

এই চালানটি আসে ‘ফ্রেশ এক্সপ্রেস ইউনিট’ ব্যবস্থার মাধ্যমে, যাতে দ্রুত এবং ঠাণ্ডা পরিবেশে আম পচে না গিয়ে টাটকা অবস্থায় ভোক্তার হাতে পৌঁছে যায়। এ ধরনের ব্যবস্থা দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশের পক্ষেই নিশ্চিত করা কঠিন, কিন্তু বাংলাদেশ তা করে দেখিয়েছে।

 

এক সময় বাংলাদেশের সেরা আম ভারতবর্ষে উপহারের ঝাঁপি হয়ে যেত। আজ সেই আমই চীনে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের নতুন পথ খুলে দিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, “এটি ভারতনির্ভর বাণিজ্য কাঠামো থেকে বেরিয়ে আসার সূচনা। চীনের বাজারে প্রবেশ মানে নতুন ভোক্তা শ্রেণির কাছে পৌঁছানো, এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির ভারসাম্য রক্ষায় কৌশলগত অগ্রগতি।”

২০২৪ সালের জুলাই মাসে চীন বাংলাদেশ থেকে আম আমদানির অনুমোদন দেয়। তারপর থেকেই শুরু হয় প্রস্তুতি। ব্যাগিং প্রযুক্তির মাধ্যমে উৎপাদিত কেমিক্যালমুক্ত আমকে প্রাধান্য দেওয়া হয়, যাতে আন্তর্জাতিক মান বজায় থাকে এবং ভোক্তাদের আস্থা অর্জন করা যায়।

 

বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে দেশে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ২.৭ মিলিয়ন টন। তার মধ্যে অন্তত ৫০০০ টন রপ্তানির পরিকল্পনা রয়েছে। এতদিন মধ্যপ্রাচ্য ছিল প্রধান রপ্তানি গন্তব্য, এবার তা ছাপিয়ে চীনের বিশাল বাজারে প্রবেশ করলো বাংলাদেশ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনে ফল আমদানির বাজার প্রতি বছরই বড় হচ্ছে। ২০২৪ সালে চীনে ফল আমদানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৯.৪৫ বিলিয়ন ডলার, যা পূর্বের বছরের তুলনায় ৬ শতাংশ বেশি। এই প্রবণতা বাংলাদেশের জন্য সুবর্ণ সুযোগ।

চীনা ক্রেতারাও বাংলাদেশের আমে সন্তুষ্ট। টাটকা স্বাদ, রাসায়নিকমুক্ত উৎপাদন এবং মানসম্মত প্যাকেজিং তাদের আস্থা তৈরি করেছে। এবার সরকার যদি সঠিকভাবে বাজার ধরে রাখতে পারে, তাহলে এই রপ্তানি শুধু বার্ষিক আয় বাড়াবে না, বরং বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের ফল রপ্তানির ভাবমূর্তি শক্তিশালী করবে।

 

এই রপ্তানিকে অনেকেই কেবল কৃষিপণ্য বাণিজ্যের বিষয় হিসেবে দেখছেন না। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটি “ড. ইউনূসের আম কূটনীতি”র বাস্তব প্রয়োগ—যেখানে কৃষিকে কূটনৈতিক শক্তিতে পরিণত করা হয়। ভারতের ওপর অতিনির্ভরতা থেকে সরে এসে বাংলাদেশ চীনের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক শক্তিশালী করছে, যার প্রতিফলন দেখা যাবে আগামী দিনের রাজনীতিতেও।

এই রপ্তানিকে ঘিরে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা, কৃষি উদ্যোক্তা, রপ্তানিকারক এবং আন্তর্জাতিক সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মাঝে নতুন আশা তৈরি হয়েছে। আমদানি করা দেশের সন্তুষ্টি যদি এভাবে বজায় থাকে, তাহলে খুব শিগগিরই আরও বড় পরিমাণে রপ্তানির দরজা খুলে যাবে।

 

বাংলাদেশের তাজা আম চীনের বাজারে সরাসরি পৌঁছে যাওয়া নিঃসন্দেহে দেশের জন্য গর্বের একটি ঘটনা। এটি শুধু রপ্তানির নয়, বরং দেশের ভাবমূর্তি, কূটনীতি এবং কৃষি অর্থনীতির এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। “নো ইস্যু, পারফেক্ট কোয়ালিটি”—চীনা কাস্টমসের এই মন্তব্য শুধু প্রশংসা নয়, বরং বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের একটি সাফল্যের স্বীকৃতি।

Nenhum comentário encontrado


News Card Generator