নিউইয়র্কের ইতিহাসে নতুন চ্যাপ্টার লিখতে চলেছেন একজন তরুণ, মুসলিম, অশ্বেতাঙ্গ রাজনীতিক—জোহরান মামদানি। ডেমোক্রেটিক পার্টির মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন নিশ্চিত করে ইতোমধ্যে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন তিনি। কিন্তু তাঁকে ঘিরে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি আলোড়ন তুলেছে, তা হলো—জয়ের পর তিনি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন ‘বাংলাদেশি আন্টিদের’, যাঁরা নিরলসভাবে ঘরে ঘরে গিয়ে প্রচার চালিয়েছেন।
২০২৫ সালের ২৪ জুন মধ্যরাতে, জোহরান তাঁর সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্যে বলেন, “আমার হয়ে যাঁরা ঘরে ঘরে গিয়ে প্রচার চালিয়েছেন, বিশেষ করে বাংলাদেশি আন্টিরা—আপনাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আপনাদের পরিশ্রম ও ভালোবাসাই আমাকে এখানে পৌঁছে দিয়েছে।” এই বক্তব্য রাতারাতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।
জোহরান মামদানি শুধু রাজনৈতিক ইতিহাসে নয়, মানবিক এবং সাংস্কৃতিক আবেগেও ছাপ ফেলেছেন। মাত্র ৩৩ বছর বয়সে নিউইয়র্কের মেয়র পদের প্রার্থী হয়ে উঠেছেন তিনি। যদি নির্বাচিত হন, তিনি হবেন শহরের সবচেয়ে কম বয়সী ও প্রথম মুসলিম মেয়র। এই তথ্য একাই তাঁকে আলাদা করেছে অন্যান্য প্রার্থীদের থেকে।
জোহরানের রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয়েছে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাওয়া এই তরুণ, রাজনীতিতে নবাগত হলেও তার পেছনে রয়েছে দৃঢ় পারিবারিক ঐতিহ্য। তাঁর মা বিখ্যাত ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা মিরা নায়ার এবং বাবা মাহমুদ মামদানি কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী। জন্মস্থান উগান্ডার কাম্পালা, তবে সাত বছর বয়সে বাবা-মায়ের সঙ্গে নিউইয়র্কে আসেন তিনি। একাধারে ভারতীয় বংশোদ্ভূত, মুসলিম ও অভিবাসী পটভূমির এই নেতার উত্থান আমেরিকান রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।
নিউইয়র্কের গরিব ও প্রান্তিক জনগণের জন্য তাঁর ভিশন অত্যন্ত সাহসী। সরকারি ব্যবস্থাপনায় সাশ্রয়ী মূল্যে মুদিদোকান, ২ লাখ অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ, চার বছর ভাড়াবৃদ্ধি নিষিদ্ধকরণ, বিনা মূল্যে শিশু পরিচর্যা, এবং ফ্রি সরকারি বাস সেবা—এসব প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি যেন সাধারণ মানুষের হৃদয় জয় করে নিয়েছেন।
জোহরানের সবচেয়ে বড় শক্তি—ভোটারদের সঙ্গে তাঁর সরাসরি সংযোগ এবং বিশ্বাস। তিনি সোজাসাপটা বলেন, স্বচ্ছতা দেখান এবং জনগণের সঙ্গে নিজের শিকড়ের সংযোগ তুলে ধরেন। ঠিক এই কারণেই, নিউইয়র্কের বাংলাদেশি অভিবাসীদের মধ্যে তাঁর ব্যাপক জনপ্রিয়তা তৈরি হয়েছে। তাঁকে সমর্থন দিতেই নিউইয়র্কের একমাত্র বাংলাদেশি কাউন্সিলর শাহানা হানিফের সঙ্গে বাংলায় ভিডিও বার্তাও প্রচার করেছেন তিনি।
তবে সবকিছুর পরও ‘বাংলাদেশি আন্টিদের’ প্রতি তাঁর ধন্যবাদ জানানো বিষয়টি ছিল সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী অংশ। এক তরুণ রাজনীতিক যেভাবে অভিবাসী কমিউনিটিকে মূল্যায়ন করেছেন, তা শুধু রাজনৈতিক কৌশল নয়—এটি হৃদয় থেকে আসা শ্রদ্ধা।
নির্বাচন এখনও পাঁচ মাস বাকি। তবে ইতিমধ্যে জোহরান মামদানি নিউইয়র্কবাসীর মনে আশার আলো জ্বালিয়েছেন। প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে তিনি এখন শুধুই একজন মেয়র প্রার্থী নন, বরং একজন ‘নিজের মতো করে ওঠা আপনজন’।
এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা—৪ নভেম্বরের ভোটে নিউইয়র্ক কি ইতিহাস রচনার সাক্ষী হবে?