close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

নির্দোষ প্রমাণ হওয়ায় খালাস পেলেন জামায়াত নেতা আজহার: আইন উপদেষ্টা..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ায় খালাস পেয়েছেন। আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলছেন,..

নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে মৃত্যুদণ্ড থেকে মুক্তি পেলেন জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম।
দেশের ইতিহাসে এক আলোচিত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় দীর্ঘদিন যাবত মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত এই নেতাকে খালাস দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এ রায়কে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে তীব্র আলোচনা-সমালোচনা।

ঘোষিত রায়ের পর সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, “আজহারুল ইসলাম নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সর্বসম্মতভাবে তার মৃত্যুদণ্ড বাতিল করেছে। এই রায় শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির মুক্তি নয়, বরং এটি একটি ন্যায়বিচারের জয়।”

আসিফ নজরুল তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া পোস্টে উল্লেখ করেন, "আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছিল, এবং আপিল বিভাগ পূর্বে সেটিকে বহাল রেখেছিল—আজকের রায়ে সেই পুরোনো রায় বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।"

তিনি আরও বলেন, “এই রায়ের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে, দেশের সর্বোচ্চ আদালত এখনো স্বাধীনভাবে বিচারিক দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম। বিচার বিভাগের এমন সাহসী সিদ্ধান্ত গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা বহন করে।”

পেছনের প্রেক্ষাপট
২০১৪ সালে এটিএম আজহারুল ইসলামকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল মুক্তিযুদ্ধের সময় রংপুর অঞ্চলে গণহত্যা ও ধর্ষণের মতো অপরাধে নেতৃত্ব দেওয়ার। এই রায়ের বিরুদ্ধে তিনি আপিল করলে ২০১৫ সালে সুপ্রিম কোর্ট তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে।

পরবর্তীতে রায়ের পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন আজহারুল। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে সুপ্রিম কোর্ট মঙ্গলবার রায় ঘোষণা করে এবং সর্বসম্মতভাবে রিভিউ আবেদন মঞ্জুর করে মৃত্যুদণ্ডাদেশ বাতিল করে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষণ ও প্রতিক্রিয়া
এই রায়কে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। জামায়াত শিবির এই রায়কে নিজেদের জন্য একটি বিচারিক বিজয় হিসেবে দেখছে, অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সংগঠনগুলো একে বিচারের পেছনে রাজনৈতিক প্রভাব বলে দাবি করছে।

আসিফ নজরুল অবশ্য এই বিষয়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষণে না গিয়ে লেখেন, "এই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার সুযোগ সৃষ্টি করেছে জুলাইয়ের গণআন্দোলনের সাহসী নেতৃত্ব। আজ আমাদের দায়িত্ব এই সুযোগ রক্ষা করা।"

তিনি কার্যত ইঙ্গিত দিয়েছেন, বিগত বছরের আন্দোলন ও চাপের ফলেই হয়তো এই রায় সম্ভব হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত
আইন বিশ্লেষকরা বলছেন, এই রায় বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার জটিলতা এবং প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে বিচার বিভাগের সক্ষমতার একটি বড় পরীক্ষা ছিল। বহু বছর পর একজন দণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীর মামলা পর্যালোচনায় গিয়ে নির্দোষ প্রমাণের এই সিদ্ধান্ত আদালতের সাহসী অবস্থানকে নির্দেশ করে।

একজন আইনজীবী বলেন, “এটা কেবলমাত্র আজহারের মামলা নয়, বরং এতে প্রমাণ হয় যে আমাদের আদালত এখনো আইন এবং তথ্যের ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারে—রাজনৈতিক চাপ উপেক্ষা করেই।”



এই রায় শুধু এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তি নয়—এটি একটি বিতর্কিত অধ্যায়ের আইনি সমাপ্তিও। এটিকে ন্যায়বিচারের প্রতিষ্ঠা হিসেবে দেখছেন কেউ কেউ, আবার কেউ বলছেন এটি বিচার ব্যবস্থার রাজনৈতিক ব্যবহারের আরেকটি উদাহরণ।

যতই বিতর্ক থাকুক, আজকের এই রায় আবারও প্রমাণ করল—বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় এখনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা আছে।

Nessun commento trovato


News Card Generator