১৯ জুলাই ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সমাবেশ করতে চায় জামায়াতে ইসলামী। ১০ লাখ লোকের উপস্থিতি, ১০ হাজার বাস, ৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক—সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত।
নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়তে শুরু করেছে। সেই উত্তাপেই এবার বৃহৎ সমাবেশের মাধ্যমে শক্তি প্রদর্শনের উদ্যোগ নিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সমাবেশ করতে যাচ্ছে তারা। দিন ধার্য হয়েছে ১৯ জুলাই শনিবার।
এই সমাবেশকে ঘিরে চলছে দলটির ব্যাপক প্রস্তুতি। লক্ষ্য একটাই—সমাবেশ হবে ইতিহাসে সবচেয়ে বড়, সবচেয়ে সাড়া জাগানো এবং শক্তিশালী রাজনৈতিক বার্তাবাহী। দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ প্রতিদিন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মিছিল, মিটিং ও জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। সমাবেশ সফল করতে মাঠপর্যায়ে দফায় দফায় চলছে প্রস্তুতিমূলক সভা ও লজিস্টিক পরিকল্পনা।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের এক সাক্ষাৎকারে জানান, এবারের সমাবেশে সারা দেশ থেকে অন্তত ১০ লাখ নেতাকর্মীকে ঢাকায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে। এজন্য তারা লঞ্চ ও ট্রেন ব্যবহার না করে শুধু বাস ব্যবস্থার ওপর জোর দিচ্ছেন। এরইমধ্যে ১০ হাজার বাস ভাড়া করার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে বলে জানান তিনি।
সমাবেশস্থলের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কাজ করবে ৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক। তাদের আলাদা ইউনিফর্ম ও দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। জামায়াত বলছে, তারা চায় একটি সুশৃঙ্খল, শান্তিপূর্ণ এবং রাজনৈতিক বার্তাসম্পন্ন একটি সমাবেশ করতে, যা বিশ্বদৃষ্টি আকর্ষণ করবে।
এ লক্ষ্যে গতকাল মঙ্গলবার জামায়াত নেতারা ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এ বৈঠকে নেতৃত্ব দেন অ্যাডভোকেট জুবায়ের নিজেই। তার সঙ্গে ছিলেন দলের আরও ছয়জন কেন্দ্রীয় নেতা। তারা বৈঠকে পুলিশের কাছে সমাবেশ সফল করতে পূর্ণ সহযোগিতা ও গঠনমূলক পরামর্শ চান। ডিএমপি প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, প্রয়োজনীয় আইনশৃঙ্খলা সহায়তা দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জামায়াতের এই নেতা বলেন, “আমরা সাত দফা দাবিতে এই সমাবেশ করছি। আমাদের লক্ষ্য পরিষ্কার—গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা। তাই চাই শান্তিপূর্ণ অংশগ্রহণ ও বিশাল উপস্থিতি।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা এখন পর্যন্ত কোনো বাধা বা হুমকির আভাস পাইনি। তবুও, সব নেতাকর্মীকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা মহানগর জামায়াত এবং সংশ্লিষ্ট থানা পর্যায়ের দায়িত্বশীলরা তৎপর রয়েছেন।”
জামায়াতের পক্ষ থেকে যে সাত দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে—
-
নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন,
-
গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তি,
-
রাজনৈতিক সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ ইত্যাদি।
এই সমাবেশ ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে একধরনের কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, এক যুগেরও বেশি সময় পর জামায়াতে ইসলামী এমন বড় পরিসরে কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রমে নামছে। এটি নির্বাচনের আগাম বার্তা, নাকি কৌশলগত পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টা—তা নিয়ে শুরু হয়েছে বিশ্লেষণ।
প্রতিনিধিদলে যাঁরা অংশ নিয়েছেন তাদের মধ্যে ছিলেন—
-
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য
-
ড. রেজাউল করিম, কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য
-
মো. দেলাওয়ার হোসেন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য
-
অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সেক্রেটারি
ডিএমপির পক্ষে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইমস অ্যান্ড অপারেশন) নজরুল ইসলাম।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই জাতীয় সমাবেশ যদি শান্তিপূর্ণভাবে ও ব্যাপক উপস্থিতিতে সফল হয়, তাহলে তা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ময়দানে জামায়াতের এক নতুন আবির্ভাব হিসেবে চিহ্নিত হবে। আবার এই সমাবেশ কতটা নিয়ন্ত্রিত ও সংঘাতমুক্ত হয়, সেটাও এখন রাজনীতির বড় প্রশ্ন।