নির্বাচনের অনিশ্চয়তায় উত্তপ্ত রাজনীতি: ড. ইউনূসের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে যাচ্ছে বিএনপি!..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
নির্বাচন নিয়ে সরকার বারবার ভিন্ন বার্তা দিচ্ছে—এতে বিএনপির মধ্যে শঙ্কা ও বিভ্রান্তি বাড়ছে। এবার সোজা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিলো দলটি। স্পষ্ট রো..

জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে দেশের রাজনীতি যখন ধোঁয়াশায় ঘেরা, তখন সেই ধোঁয়াশা কাটাতে সরাসরি প্রধান উপদেষ্টার দ্বারস্থ হচ্ছে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি। চলমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত নির্বাচন বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট রোডম্যাপ বা সময়সীমা না পাওয়ায় বিএনপির ভেতরে উদ্বেগ বাড়ছে। এই উদ্বেগ থেকেই দলটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করে নির্বাচন নিয়ে তাদের অনিশ্চয়তা ও মতামত জানাবে।

সোমবার (৭ এপ্রিল) রাতের গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য ইতোমধ্যে সময় চাওয়া হয়েছে।

সূত্র মতে, বৈঠকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল নির্বাচনকালীন রোডম্যাপ এবং নির্বাচনকেন্দ্রিক সংস্কার। উল্লেখ্য, ২৩ মার্চ বিএনপি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে পাঁচটি সংস্কার প্রস্তাবনা জমা দিয়েছে। সেখানে দলটির স্পষ্ট অবস্থান—নির্বাচন নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। সরকারকে এই সংস্কারে সহযোগিতা করতেই তারা ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছে।

বিএনপির নেতাদের অভিমত, নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় হিসেবে যেসব তারিখ সামনে এসেছে—যেমন চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুন—তা ধোঁয়াশাপূর্ণ। কারণ সরকার পক্ষ একেক সময় একেক ধরনের বার্তা দিচ্ছে। তারা মনে করছে, এতে করে নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। এ অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান স্পষ্টভাবে জানতে চায় বিএনপি।

দলটি বলছে, নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কিত যেসব সংস্কার রয়েছে, সেগুলো বর্তমান সরকার অধ্যাদেশের মাধ্যমে করতে পারে। এরপর নির্বাচিত সংসদে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে আরও প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্ভব। তবে নির্বাচন যেন এই বছরের মধ্যেই হয়, সে বিষয়ে সরকারকে চাপ প্রয়োগ করা হবে।

বিএনপির পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের পর পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবে দলটি। এমনকি নির্বাচনী কর্মসূচিও আসতে পারে—যদি স্পষ্ট রোডম্যাপ না পাওয়া যায়।

বৈঠকে আরও সিদ্ধান্ত হয়, পহেলা বৈশাখ (১৪ এপ্রিল) বড় পরিসরে উদযাপন করা হবে। ঢাকা শহর ছাড়াও জেলা পর্যায়ে বর্ণাঢ্য আয়োজনে দেশীয় সংস্কৃতি তুলে ধরার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

এছাড়াও বৈঠকে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের আগ্রাসন এবং গণহত্যার তীব্র নিন্দা জানানো হয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বিএনপি তার অবস্থান বারবার তুলে ধরছে।

প্রসঙ্গত, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বর্তমানে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে রয়েছেন। তিনি দেশে ফিরলেই ড. ইউনূসের সঙ্গে দলের নির্ধারিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ফখরুলের সঙ্গে তার স্ত্রীও রয়েছেন সিঙ্গাপুরে, এবং আগামী সপ্তাহে তার ঢাকা ফেরার কথা রয়েছে।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ (বীরবিক্রম), এবং ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।

 

একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য দরকার সুস্পষ্ট রোডম্যাপ, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও সময়মতো কার্যকর পদক্ষেপ। বিএনপি এখন সেই বার্তা স্পষ্টভাবে জানতে চায়—সরাসরি সরকারের মুখ থেকে। সামনে রাজনীতির মাঠ যে আরও উত্তপ্ত হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

コメントがありません


News Card Generator