close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

নির্বাচনের আগে একটি নীরব বার্তা সেনাপ্রধানের বক্তব্য, রাষ্ট্রের অন্তর্দ্বন্দ্ব ও রাজনৈতিক বিভাজন..

Sampadakiya Anuchchhed avatar   
Sampadakiya Anuchchhed
এই গবেষণামূলক প্রবন্ধে বিশ্লেষণ করা হয়েছে সদ্য ফাঁস হওয়া সেনাপ্রধানের বক্তব্যের তাৎপর্য, যার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের রাজনীতি, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কাঠামো এবং আন্তর্জাতিক কৌশলগত চাপে জাতীয় নিরাপত্তা নীতির জট..

 

এই গবেষণামূলক প্রবন্ধে বিশ্লেষণ করা হয়েছে সদ্য ফাঁস হওয়া সেনাপ্রধানের বক্তব্যের তাৎপর্য, যার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের রাজনীতি, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কাঠামো এবং আন্তর্জাতিক কৌশলগত চাপে জাতীয় নিরাপত্তা নীতির জটিলতা নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে সেনাবাহিনী, সরকার, বিরোধী দল- তিন পক্ষের দ্বন্দ্ব, অভ্যন্তরীণ সংকট এবং ভবিষ্যতের সম্ভাব্য কৌশলগত পরিণতি তথ্য-উপাত্ত ও বিশ্লেষণভিত্তিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি চিঠি ফাঁস হয়েছে- যেখানে সেনাপ্রধান আভ্যন্তরীণ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখছিলেন। সেই বক্তব্যে উপস্থিত ছিলেন শুধুমাত্র সামরিক বাহিনীর সদস্যরা, কোন সাংবাদিক বা বেসামরিক প্রতিনিধি ছিলেন না। 

অথচ বক্তব্যটি অনলাইনমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, এবং মুহূর্তেই তা রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। প্রশ্ন জাগে- এই ফাঁস কি দুর্ঘটনাবশত, নাকি এটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত একটি 'কৌশলগত নির্গমন'? আর যদি কৌশল হয়, তাহলে উদ্দেশ্য কী?

বক্তব্যটির ভাষাগত বিন্যাস ও শব্দচয়ন ছিল অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও কৌশলনির্ভর। 'আমরা সবাই দেখছি', অনেকে বলছে, 'রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করতে চায় কিছু শক্তি'- এই ধরনের বাক্যাংশগুলি আসলে কার উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে? যারা অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ, তাদের নাম নেওয়া হয়নি- কিন্তু একধরনের সতর্কবার্তা স্পষ্ট ছিল। 

আবার সরকারের পক্ষ নেওয়ার কোনো সরাসরি ইঙ্গিতও পাওয়া যায়নি। এই সূক্ষ্মতা দেখায়, বক্তব্যটি শুধু বাহিনীর অভ্যন্তরেই সীমাবদ্ধ রাখার উদ্দেশ্যে ছিল না। বরং, এটি ‘ছড়িয়ে পড়বে’ এই প্রত্যাশাতেই সম্ভবত পরিকল্পিতভাবে প্রকাশ পেয়েছে।

সেনাপ্রধানের এই বক্তব্য এমন এক সময় ফাঁস হলো, যখন দেশে ভোট নিয়ে আন্দোলন ও উত্তেজনা বাড়ছে। বিগত ১৬ বছরে দেশে একাধিক নির্বাচন হয়েছে যেগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে। 

গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, বিরোধীদের দমন নীতিকে কেন্দ্র করে সরকারকে স্বৈরতান্ত্রিক বলা হচ্ছে। এদিকে বিরোধী দল- বিশেষ করে বিএনপি, অনেক বছর নিরব থাকার পর আবার আন্দোলনে সক্রিয় হয়েছে। 

কিন্তু তাদের অতীত ভূমিকা, বিশেষ করে জামায়াতের সাথে জোট এবং নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তের কারণে তাদের ওপরও জনআস্থার ঘাটতি আছে। ফলে এখন প্রশ্ন উঠছে- সরকার, বিরোধী দল, নাকি সেনাবাহিনী- কে রাষ্ট্রের প্রকৃত রক্ষক বা হুমকি?

১. সেনাবাহিনী: নিরপেক্ষতা না প্রভাব বিস্তার?

বক্তব্যে সেনাপ্রধান বলেছেন, "আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি", আবার একইসঙ্গে বলেছেন, যারা রাষ্ট্রবিরোধী, তাদের চিহ্নিত করতে হবে।

এই বক্তব্য দুই রকম ব্যাখ্যার সুযোগ রাখে। প্রথমত, সেনাবাহিনী নিজেকে গণতন্ত্রের ধারক হিসেবে দেখাতে চায়; দ্বিতীয়ত, তারা চাইছে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া শক্তিগুলোকে দমন করতে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি কে? বিরোধী দল? আন্তর্জাতিক সমালোচক? না কি ক্ষমতায় থেকে জবাবদিহিহীনভাবে শাসন করা সরকার নিজেই?

বিশ্লেষকরা বলছেন, সেনাবাহিনীর এই মধ্যবর্তী ভাষা একদিকে সরকারকে সতর্ক করছে- অন্যদিকে বিরোধী দলকেও সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে না। 

এটি একটি কৌশল, যাতে সেনাবাহিনী ভবিষ্যতের যেকোনো পরিবর্তনের ক্ষেত্রে নিজেদের বৈধতা ধরে রাখতে পারে। ২০০৭ সালে যেমন একটি অঘোষিত সামরিক পৃষ্ঠপোষক সরকারের উত্থান ঘটেছিল, সেরকম কোনো পুনরাবৃত্তি কি ঘটতে যাচ্ছে?

তবে এবার সেনাবাহিনী অনেক বেশি সাবধান। তারা জানে, অতীতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছে। আন্তর্জাতিক মহল, বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলো- যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘ- একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচন চায়। 

চীন ও ভারতের মত দেশগুলো যদিও অনেক সময় সরকারের পাশে থেকেছে, তথাপি এখন তাদেরও গণবিপ্লব বা অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা চায় না। সেক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর সামনে দুটি পথ- নীরব থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা, অথবা নিয়ন্ত্রিত হস্তক্ষেপের মাধ্যমে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সমঝোতা তৈরি করা।

২. রাষ্ট্রের বিপরীতে কে দাঁড়িয়ে?

প্রথম দৃষ্টিতে মনে হয়, বিরোধী দল রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ করছে- তারা সহিংসতা করছে, নির্বাচন বর্জন করছে, আন্তর্জাতিক চাপ আনছে। কিন্তু সরকার কি পুরোপুরি রাষ্ট্রের সমার্থক? 

যদি সরকার জনগণের ভোট ছাড়া ক্ষমতায় থাকে, তাহলে তার বৈধতা নিয়েই তো প্রশ্ন। আর সে প্রশ্ন করলেই কেউ রাষ্ট্রবিরোধী হয়ে যায় না। একইভাবে জামায়াতের গোপন তৎপরতা, মৌলবাদী গোষ্ঠীর পুনরুজ্জীবন এবং ক্ষমতার বাইরে থাকা গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র- এসবই রাষ্ট্রের জন্য হুমকি হতে পারে।

তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে- রাষ্ট্রের চেতনা কোথায়? যখন রাষ্ট্রের প্রশাসন রাজনৈতিক দলবিশেষের হাতে বন্দি হয়ে পড়ে, তখন সেনাবাহিনী এমন বক্তব্য দেয়- যা একদিকে জনগণকে আশ্বস্ত করে, আবার অপরদিকে সকল পক্ষকে সতর্ক করে। 

বক্তব্য ফাঁসের মাধ্যমে সেনাবাহিনী যেন বলছে- “আমরা আছি, কিন্তু এখনই নয়।” এই “এখনই নয়” কথাটাই সবচেয়ে গভীর সংকেত। এটি হয়তো সরকারের জন্য শেষবারের মতো একটা বার্তা, অথবা বিরোধী দলের প্রতি একটা নরম হুঁশিয়ারি।

বিশ্বরাজনীতির ক্ষেত্রেও এই বার্তা তাৎপর্যপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি একাধিকবার সুষ্ঠু নির্বাচন এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে। একই সঙ্গে র‌্যাব ও পুলিশের ওপর নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে। 

সেনাবাহিনী এই প্রেক্ষাপটে নিজেদের ‘ব্যালান্সিং ফোর্স’ হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়। তারা চায় না যেন দেশে আবার সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে, কিন্তু তারা সরকারকে সরাসরি চ্যালেঞ্জও করতে চায় না- এটি একধরনের সামরিক কূটনীতি।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: 

এই বক্তব্য ছিল নিছক একটি বক্তব্য নয়, বরং একটি রাজনৈতিক ‘সিগন্যালিং মেকানিজম’। এখানে সেনাবাহিনী তাদের অবস্থান পরিষ্কার করল- তারা এখনো মাঠে নামেনি, কিন্তু প্রয়োজন হলে প্রস্তুত। সরকার, বিরোধী দল ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এটি ছিল একধরনের 'মার্জিনাল ওয়ার্নিং'।

এই প্রবন্ধে আমরা দেখলাম, কিভাবে একটি ভাষণ রাজনৈতিক অন্তঃসার, কৌশলগত নিঃশব্দতা এবং রাষ্ট্রীয় সংকটের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হতে পারে। এখন রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিন পক্ষের উপর- সরকারের উপর যে তারা ক্ষমতা ছাড়তে প্রস্তুত কি না, বিরোধী দলের উপর যে তারা দায়িত্বশীলভাবে রাজনৈতিক লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে পারে কি না, এবং সেনাবাহিনীর উপর যে তারা কবে, কোথায় এবং কতটা হস্তক্ষেপ করবে।

অর্থাৎ, ফাঁস হওয়া ভাষণের মূল বার্তা একটাই “তুমি দেখছো না, কিন্তু আমরা দেখছি।”

What you think, say, do, who you stand beside, what you endorse, what you write, and even what you silently avoid—everything is being quietly archived; because today, it’s no longer just about surveillance, but about profiling, alignment, and moral shadow governance that is fast becoming the most powerful political weapon of the future.

Geen reacties gevonden