চট্টগ্রামে এক আলোচনা সভায় গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর স্পষ্ট জানালেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হচ্ছে না। দলটি এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে এবং তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক আদর্শে কাজ করবে।
চট্টগ্রামের আলোচিত জুলাই স্মৃতি হলে আয়োজিত এক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সভায় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর। রবিবার সকালে গণ অধিকার পরিষদের চট্টগ্রাম মহানগর শাখা আয়োজিত ‘গণ-অভ্যুত্থানের জন–আকাঙ্ক্ষা ও রাষ্ট্র সংস্কার’ শীর্ষক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, “গণ অধিকার পরিষদ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হচ্ছে না। আমরা আমাদের নিজস্ব শক্তি ও নীতিতে বিশ্বাস করি।
নুরুল হক নুর বলেন, আওয়ামী লীগ শাসনামলে বিএনপি, জামায়াতসহ সব সরকারবিরোধী শক্তি ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে ছিলাম আমরা। সেই সময়ে আমাদের লক্ষ্য ছিল একটাই—ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন। কিন্তু এখন সেই পর্ব শেষ। এখন সময় এসেছে যে যার রাজনৈতিক অবস্থান ও নীতি অনুযায়ী এগিয়ে যাওয়ার।
তিনি আরও বলেন, আমরা কখনো বলিনি যে আমরা বিএনপি বা জামায়াত বা অন্য কোনো দলের সঙ্গে জোট করে নির্বাচনে যাব। অথচ বিভিন্ন সময় কিছু মানুষ বিভ্রান্তিকর ব্যাখ্যা দিয়েছেন আমাদের বক্তব্য নিয়ে। কখনো হয়তো আমাদের কথাবার্তা বিএনপি কিংবা জামায়াতের স্বার্থে গেছে, কিংবা কখনো চরমোনাইয়ের পক্ষে গেছে—তাতে কি প্রমাণ হয় যে আমরা তাদের সঙ্গে জোট করেছি? না, এটি সম্পূর্ণ ভুল ব্যাখ্যা।
নুর এ সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকে ‘জোট গঠন’ হিসেবে তুলে ধরার সমালোচনা করে বলেন, আমি যদি জামায়াত কিংবা ইসলামী আন্দোলনের কোনো অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিই, তাতে কী প্রমাণ হয়? এটা তো গণতন্ত্রের অংশ, মত প্রকাশের স্বাধীনতা। কিন্তু অনেকে এটাকে জোট মনে করে ভুল করছে।
আনুপাতিক হারে নির্বাচন প্রসঙ্গে নুর বলেন, “আমাদের দল যখন যাত্রা শুরু করেছিল, তখন থেকেই আমরা বলেছি—আমরা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ চাই এবং আনুপাতিক হারে নির্বাচন চাই। আজ অনেকে বলছে, এটি রাজনৈতিক কৌশল কিংবা নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার জন্য পাঁয়তারা। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, এটি কোনো হঠাৎ সিদ্ধান্ত নয়—এটি আমাদের দলের ঘোষণার অংশ এবং আদর্শিক অবস্থান।
গণ অধিকার পরিষদের এই অবস্থান দেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে বলে অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন। তাদের মতে, রাজনৈতিক অঙ্গনে দলটির অবস্থান এবং স্বতন্ত্র কণ্ঠস্বর ভবিষ্যতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করে। বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের কাছে এই দলটি নতুন রাজনৈতিক সম্ভাবনা হয়ে উঠতে পারে, যদি তারা তাদের নীতি ও অবস্থান ধরে রাখতে পারে।
নুরুল হক নুরের বক্তব্যে যে আত্মবিশ্বাস ও স্পষ্টতা ছিল, তা স্পষ্ট করে দেয়—তারা কোনো আপসের রাজনীতি নয়, বরং নীতির ভিত্তিতে গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য এটি একটি ইতিবাচক বার্তা।