আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক মাঠে ফের শুরু হয়েছে আলোচনার ঝড়। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ভিন্ন মতামত, নির্বাচনের সময় নির্ধারণে অনিশ্চয়তা এবং যুগপৎ আন্দোলনের ভবিষ্যৎ কৌশল নিয়ে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বিরোধীদল বিএনপি তাদের আন্দোলন-সঙ্গী ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে বৈঠকে বসেছে। শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেল সোয়া ৩টায় বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে নেতৃত্ব দেন দলের লিয়াঁজো কমিটির সদস্য ও স্থায়ী কমিটির নেতা নজরুল ইসলাম খান।
দীর্ঘ প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলা এই বৈঠক শেষ হয় বিকেল ৫টার দিকে। বৈঠকে ১২ দলীয় জোটের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন: জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামান হায়দার, বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম এবং বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা।
বৈঠকে নির্বাচনী পরিস্থিতি, আন্দোলনের পরবর্তী ধাপ এবং সরকারের আচরণ নিয়ে গভীর আলোচনা হয়। বিএনপি এই বৈঠকের মাধ্যমে মূলত জোটের শরিকদের সঙ্গে একমত হয়ে কৌশল নির্ধারণ করতে চায় বলে জানা গেছে। বৈঠকে বিএনপি জানায়, তারা ডিসেম্বরের মধ্যেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানাচ্ছে। যদিও সরকারপক্ষ থেকে নির্বাচনের নির্দিষ্ট দিন জানানো হয়নি—বরং জানানো হয়েছে, ডিসেম্বর থেকে জুন—এই ছয় মাসের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই অস্পষ্টতা ও অনিশ্চয়তা নিয়ে গভীর অসন্তোষ প্রকাশ করেছে বিএনপি।
বৈঠকের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—এটি ছিল বিএনপির ধারাবাহিক বৈঠকের একটি অংশ। দলটি পর্যায়ক্রমে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও বসছে। ওই দিন সন্ধ্যায় তাদের আরেকটি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)-এর সঙ্গে। এটি থেকে স্পষ্ট, বিএনপি নির্বাচন ও আন্দোলন সামনে রেখে প্রতিটি শরিক দলের সঙ্গে আলাদা আলাদা মতবিনিময় করে নতুন কর্মপরিকল্পনা দাঁড় করাতে চাইছে।
এই বৈঠকের আগের দিন, অর্থাৎ ১৭ এপ্রিল, বিএনপি বসেছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে। সেখানেও উঠে আসে অনুরূপ আলোচনা এবং নির্বাচনের সময়কাল নিয়ে সংশয়। বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো প্রতিক্রিয়াতেও ছিল গভীর অসন্তোষের ইঙ্গিত। এই অসন্তোষের জের ধরেই ওই রাতেই বিএনপির স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক ডাকা হয়। সেখানে কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয় দলটি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই বৈঠকগুলো বিএনপির ভবিষ্যৎ আন্দোলনের রূপরেখা নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখবে। সরকার নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন না দিলে আন্দোলন আরও কঠোর হবে বলেও আভাস দিয়েছে বিএনপি নেতারা।
এখন রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন—এই ধারাবাহিক বৈঠক ও সমন্বয়ের মাধ্যমে কি বিএনপি আগামী নির্বাচনের একটি শক্তিশালী ব্লক তৈরি করতে পারবে? নাকি সরকারের নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই একটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন দেখতে হবে দেশবাসীকে?