close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

নির্বাচন নিয়ে চাপের মুখে অধ্যাপক ইউনূসের পদত্যাগের হুমকি’: নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগের হুমকি দিলেন। তিনি বলছেন, নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় চাপ আর বাধার কারণে দায়িত্ব পালন অসম্ভব হয়ে পড়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারে..

দেশের রাজনৈতিক সংকট ও নির্বাচনী চাপের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগের হুমকি দিয়েছেন। দেশের বর্তমান অস্থির ও বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, এভাবে দায়িত্ব পালন করা কঠিন। নির্বাচন সংক্রান্ত চাপের কারণে তিনি তার দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না এবং যদি পরিস্থিতি এমনই থাকে, তাহলে প্রধান উপদেষ্টার পদে থাকা আর কতদিন যুক্তিযুক্ত হবে?

এই পদত্যাগের সম্ভাবনা নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, শিরোনামে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচন নিয়ে চাপের মুখে অধ্যাপক ইউনূসের পদত্যাগের হুমকি’। প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা এবং মুহাম্মদ ইউনূসের অসহযোগিতা ও হতাশার কারণ।

গত আগস্টে, বাংলাদেশের শেখ হাসিনা সরকারের কঠোর কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে লাখ লাখ মানুষ অংশ নিয়ে একটি নতুন রাজনৈতিক আশার জন্ম দিয়েছিল। ওই সময় অনেকেই মনে করেছিলেন, দেশের গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবিত হতে চলেছে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও দ্রুততার কোনো লক্ষণ নেই, যা হতাশা সৃষ্টি করেছে।

মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় নেতা হিসেবে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক ও সামরিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ঐক্যের কারণে তিনি বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। এই ঐক্য তাঁর নীতিগুলোকে কঠোর সমালোচনার মুখে ফেলে দিয়েছে এবং নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ধীরগতি আনার অভিযোগ উঠেছে। তারই প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার তিনি রাজনৈতিক ও সামরিক সমর্থন না পেলে পদত্যাগ করবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

উপদেষ্টাদের মধ্যে তিনি ইতোমধ্যে পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার খসড়া তৈরির পর্যায়ে পৌঁছেছেন। তবে অন্য উপদেষ্টারা তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে তাঁর পদত্যাগ বাংলাদেশের পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল করে তুলবে। সেনাপ্রধানের সম্প্রতি নির্বাচনের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা দেওয়ার পর মুহাম্মদ ইউনূস মানসিক চাপ ও রাজনৈতিক সমালোচনার মুখে পড়েছেন।

দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দলগুলি নির্বাচনে জয়ের জন্য আশাবাদী, কারণ ruling party আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়ায় কার্যত কোনো শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই। এর ফলে দেশের আইনশৃঙ্খলাও দুর্বল হয়ে পড়েছে, যা সমাধানের প্রচেষ্টা অগোছালো অবস্থায় রয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বিএনপির ক্রমবর্ধমান চাপে মুহাম্মদ ইউনূসের নিজস্ব রাজনৈতিক সমর্থন নেই।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মোবাশ্বার হাসানের মতে, মুহাম্মদ ইউনূস একজন দক্ষ ব্যাংকার ও প্রতিষ্ঠান নেতা হলেও তার দৃঢ় ও শক্তিশালী নেতৃত্বের অভাব স্পষ্ট। তিনি প্রভাবশালী উপদেষ্টাদের নিয়ন্ত্রণে থাকেন, যা দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টি করছে। একজন কাছের কর্মকর্তা জানান, গণতন্ত্রের উন্নয়নে সহায়তার বদলে অনেকেই তাঁকে উপেক্ষা করছেন। সেনাপ্রধানের নির্বাচনের জন্য সময় নির্ধারণের বক্তব্যের পর তার ধৈর্য অনেকটাই শেষ।

অধ্যাপক ইউনূস পূর্বে বলেছেন, ২০২৬ সালের জুন নাগাদ দেশের নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তুত হতে পারে। তবে বর্তমানে তিনি মনে করেন বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত নয়। তিনি সর্বশেষ ভাষণে উল্লেখ করেন, ‘নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু হয়েছে, তবে পথ চলায় অনেক কাজ বাকি আছে।’

এদিকে, বিএনপি বারবার দাবি করছে, দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের জন্য একটি গণতান্ত্রিক ম্যান্ডেট অপরিহার্য। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার কারণে বিরোধী দলটি ক্ষমতায় আসার সুযোগ খুঁজছে।

গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের নিয়মিত বৈঠকের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পালনে বাধা রয়েছে। বৈঠকের আলোচনায় সড়ক অবরোধ, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের অভাব ও রাষ্ট্রীয় কাজে অসহযোগিতা বিষয়গুলো উঠে আসে। সংস্কারে অগ্রগতি না হওয়ায় তিনি নিজের অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন।

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় গিয়ে জানান, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগের বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছেন।

অন্যদিকে, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে দীর্ঘক্ষণ তার সঙ্গে কথা বলে তিনি নিজের হতাশার কথা ব্যক্ত করেন। দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সংস্কারের অভাব দেখিয়ে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের হুমকি অন্তর্বর্তী সরকারের ভবিষ্যৎ অন্ধকার করে দিয়েছে।

Inga kommentarer hittades