close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

নির্বাচন কবে?'—দেশজুড়ে জল্পনা, বিভক্ত রাজনৈতিক দল ও বিশ্লেষকেরা, বাড়ছে অনিশ্চয়তা!..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন কবে হবে, সে প্রশ্নে এখনো নেই কোনো স্পষ্টতা। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতানৈক্য, বিশ্লেষকদের মতভেদ, আর নির্বাচন কমিশনের দ্বিধা মিলে গড়াচ্ছে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। এই বিভ্রান্তি কেবল ..

নির্বাচনের সময় নিয়ে ধোঁয়াশা: জাতিকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে রাজনৈতিক মতভেদ

বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন কবে অনুষ্ঠিত হবে—এটি এখন দেশের সবচেয়ে আলোচিত ও বিতর্কিত রাজনৈতিক প্রশ্ন। রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমত, বিশ্লেষকদের দ্বিধা এবং নির্বাচন কমিশনের অস্পষ্ট রোডম্যাপ এই বিষয়ে আরও ধোঁয়াশা তৈরি করেছে। মূলত অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই শুরু হয় সময়সীমা নিয়ে বিতর্ক, যার এখনো কোনো মীমাংসা হয়নি।

একদিকে বিএনপি ও তাদের মিত্ররা চাইছে দ্রুত নির্বাচনের আয়োজন, অন্যদিকে ছোট ও নতুন দলগুলো সময় নিতে বলছে। ইসলামী দলগুলো চলতি বছরের মধ্যেই নির্বাচন চায়, আবার কেউ কেউ বলছে, সংস্কার না হলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় রাজনৈতিক জটিলতা আরও গভীর হচ্ছে।


নেতাদের মন্তব্যে বিভ্রান্তি বাড়ছে

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে। তিনি বিএনপি নেতাদের আশ্বস্ত করলেও নির্দিষ্ট কোনো তারিখ দেননি। এ বিষয়ে বিএনপি একেবারেই সন্তুষ্ট নয় বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি নির্বাচনের সময় নির্ধারণে রমজান, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা এবং বর্ষাকালকে বিবেচনায় নেওয়ার তাগিদ দেন।

এদিকে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেন, ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করা হলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অন্যান্য চ্যালেঞ্জ আসবে। তাই রমজানের আগেই নির্বাচন হওয়া উচিত। তিনি তিনটি শর্ত পূরণের দাবি জানিয়েছেন—সংস্কার, ফ্যাসিস্টদের বিচার এবং একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পদ্ধতি।

জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম বলেন, প্রশাসন বিএনপির পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না বলে তারা দাবি জানিয়ে গণপরিষদ নির্বাচনের প্রস্তাবও তুলে ধরেছেন।


বিশ্লেষকদের চোখে পরিস্থিতি

সাবেক সচিব ও রাজনীতি বিশ্লেষক আবু আলম শহীদ খান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মূল দায়িত্ব হচ্ছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন। তিনি মনে করেন, নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে যৌক্তিক সময় নির্ধারণ করা উচিত। তিনি বলেন, “নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নিয়ে বিভ্রান্তি কাম্য নয়। দেরি হলে অনাকাঙ্ক্ষিত প্রভাব পড়বে।”

অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক শহীদুজ্জামান মনে করেন, নির্বাচনের সময়সীমা (ডিসেম্বর থেকে জুন) মোটামুটি পরিষ্কার। তবে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন পিছিয়ে যেতেই পারে।

রিটায়ার্ড কর্নেল আব্দুল হক, যিনি জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিলেন, বলেন, অধ্যাপক ইউনূস একটি অতিরিক্ত দিনও বেশি সময় নেবেন না। তাঁর প্রতি বিশ্বাস রেখে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়া উচিত।


নির্বাচন কমিশন রোডম্যাপ দেবে না, তবে কাজ চলছে

নির্বাচন কমিশনের দুই সদস্যের মধ্যে মতবিরোধ স্পষ্ট। একজন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার জানান, জুলাইয়ে রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে। অন্যদিকে কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, এটি রোডম্যাপ নয়, বরং একটি কর্মপরিকল্পনা হবে। ডিসেম্বরকে ধরে প্রস্তুতিমূলক কাজ এগোচ্ছে।

তাঁর মতে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে নতুন ভোটারদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। আইন সংশোধন করে এই ভোটারদের অন্তর্ভুক্তির কাজ জুনের মধ্যেই শেষ হবে। নতুন দল নিবন্ধনের সময়সীমাও বাড়ানো হয়েছে।

সীমানা পুনর্নির্ধারণের বিষয়েও আইন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তবে তিনি মনে করেন, বর্তমানে সীমানা নিয়ে বড় কোনো আপত্তি নেই। পাশাপাশি নারী আসন সরাসরি নির্বাচনের প্রস্তাব থাকলেও তা এখনো আইন হয়নি।


সংকটের মূল: রাজনৈতিক ঐকমত্যের অভাব

বিশ্লেষক ড. রেজা কিবরিয়া সরাসরি অভিযোগ করেন, অন্তর্বর্তী সরকার নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপিকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে। এতে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক বলেন, বিভ্রান্তি অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক তৈরি করছে। নির্বাচনের জন্য কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডা ছাড়া সরকার কাজ করলে সেটাই হবে দেশের জন্য মঙ্গলজনক। একইসঙ্গে তিনি মনে করেন, অপরাধের বিচার এবং সংস্কার নির্বাচন ঠেকানোর কারণ হতে পারে না।

ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব ইউনুস আহমাদ সতর্ক করে বলেন, রাজনৈতিক চাপের কারণে সংস্কার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হলে তা হবে শহীদদের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। যারা অভ্যুত্থানে আহত হয়েছেন, তাঁদের প্রতি জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।


উপসংহার: সিদ্ধান্তহীনতা নয়, দরকার স্পষ্ট রোডম্যাপ ও ঐক্য

নির্বাচনের সময় নির্ধারণে দ্বিধা, মতবিরোধ এবং অস্বচ্ছতা রাজনৈতিক অস্থিরতাকে বাড়িয়ে তুলছে। অন্তর্বর্তী সরকার, রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন এবং বিশ্লেষক—সব পক্ষকেই দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। স্বচ্ছ রোডম্যাপ, অন্তর্ভুক্তিমূলক আলোচনা এবং নিরপেক্ষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই দেশকে গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

বাংলাদেশ এখন এমন এক মোড়ে দাঁড়িয়ে, যেখানে প্রতিটি সিদ্ধান্তের গুরুত্ব বিশাল। নির্বাচন কবে হবে—এটি শুধু একটি তারিখ নয়, এটি একটি জাতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণের দিকচিহ্ন।

Ingen kommentarer fundet


News Card Generator