প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেছেন, এর সঙ্গে কোনো ধরনের সমঝোতা করা হবে না। সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে একটি উৎসবমুখর, অংশগ্রহণমূলক ও ঐক্যবদ্ধ নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করতে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বুধবার (১৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে ঘোষণা দেন— “নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হবে, এর সঙ্গে কোনো কম্প্রোমাইজ করা হবে না।”
তিনি বলেন, “আপনারা সবাই মিলে জাতীয় সনদ তৈরি করেছেন। এখন সরকারের দায়িত্ব হলো উৎসবমুখর নির্বাচন করে দেওয়া। সেই নির্বাচন যেন সবার অংশগ্রহণে হয়, সেটাই হবে আমাদের মূল লক্ষ্য।”
প্রধান উপদেষ্টা জানান, নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিচ্ছে। “উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন হবে। তার জন্য যা যা করতে হয়, সাধ্য অনুযায়ী আমরা সবকিছু করব,” তিনি যোগ করেন।
ড. ইউনূস আরও বলেন, “আমরা আশাবাদী যে, ১৭ অক্টোবর জুলাই সনদ সই হবে উৎসবমুখর পরিবেশে। জাতি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তের জন্য।”
তিনি ব্যাখ্যা করেন, “জুলাই সনদ সই হয়ে গেলেই কাজ শেষ নয়, বরং এটি একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা। এই সনদকে পাঠ্যবইসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে হবে, যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জানে, কীভাবে ঐকমত্য সৃষ্টি হয়েছিল।”
ড. ইউনূস বলেন, “আপনারা যে দলিলগুলো তৈরি করেছেন, সেগুলো অমূল্য সম্পদ। আমরা এগুলো সংরক্ষণ করব, ভিডিও, বই ও অনলাইন আর্কাইভে রাখব যাতে হারিয়ে না যায়। সামাজিক মাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা করা হবে, যাতে সবাই বুঝতে পারে— আমরা কেন এবং কীভাবে ঐকমত্যে পৌঁছেছি।”
তিনি আরও বলেন, “যে অসম্ভবকে আপনারা সম্ভব করেছেন, সেটা শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসে নয়, গোটা বিশ্বের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। এত ভিন্ন মতের মানুষ একসাথে বসে ঐক্যমত্যে পৌঁছানো— এটা এক যুগান্তকারী ঘটনা।”
ড. ইউনূস দৃঢ়ভাবে বলেন, “আজকের এই অর্জন শুধু একটি সনদ নয়, এটি জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। মানুষ চিরদিন মনে রাখবে যে, আমরা একটি অসম্ভব কাজকে সম্ভব করেছি। আমি গর্বিত, এই ঐতিহাসিক যাত্রায় আমি অংশ নিতে পেরেছি।”
বৈঠকে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলন, জেএসডি (রব), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, এবি পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এই বৈঠকটি রাজনৈতিক মহলে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, প্রধান উপদেষ্টার দৃঢ় অবস্থান ও ঐক্যের বার্তা আগামী নির্বাচনের পথকে সুগম করবে এবং দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা ঘটাবে।