close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

নিরাপত্তা পরিষদের উত্তপ্ত বৈঠক, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে ইরান-রাশিয়ার তুলাধোনা..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
নিউইয়র্কে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক পরিণত হলো ইরান-ইসরায়েল পাল্টাপাল্টি অভিযোগে এক উত্তপ্ত রণক্ষেত্রে! যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া ও তাদের মিত্ররা প্রকাশ্যে একে অপরকে তুলাধোনা করল। পারমাণবিক অস্ত্র, আ..

নিউইয়র্কের জাতিসংঘ সদর দপ্তরে যখন নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক শুরু হয়, তখন ধারণাও করা যায়নি—সেটি পরিণত হবে এক ‘কূটনৈতিক রণক্ষেত্রে’। ইরান ও ইসরায়েল মুখোমুখি অবস্থানে তাদের মিত্রদের নিয়ে পরস্পরকে তুলাধোনা করে, আর সেই দ্বন্দ্বে সরাসরি জড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীনসহ বিশ্বশক্তিগুলো।

যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান উঠলেও, কে দোষী—তা নিয়ে তুমুল বিতর্কই যেন বৈঠকের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে এবার উঠে আসে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি, শিশু হত্যার প্রমাণচিত্র, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন এবং গণহত্যার পরিকল্পনার মতো ভয়ংকর সব অভিযোগ।

ইসরায়েলের দাবি, তেহরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে। আত্মরক্ষার্থে ইরানে বিমান হামলা চালানো হয়েছে। এরই প্রতিক্রিয়ায় ইরানও পাল্টা ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এই সংঘাতের কেন্দ্রে এখন পুরো বিশ্ব।

জাতিসংঘে ইরানের স্থায়ী প্রতিনিধি আমির সাঈদ ইরাভানি বলেন, “ইসরায়েল এক সন্ত্রাসী রাষ্ট্র। তারা নিরপরাধ শিশুদের হত্যা করে, অন্য দেশের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ করে।” বক্তব্য দেওয়ার সময় নিহত শিশুদের ছবি তুলে ধরেন তিনি।

উল্টো সুরে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন বলেন, “ইরান নাটক করছে। গণহত্যার ছক এঁকে এখন বিশ্বকে বোকা বানানোর চেষ্টা করছে তারা।”

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি ডরোথি শে সাফ জানিয়ে দেন, “ইরানই মধ্যপ্রাচ্যে সন্ত্রাস ও অস্থিরতার প্রধান উৎস। আমরা ইসরায়েলের পাশে আছি।”

তবে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বলেন, ইরানকে দোষারোপ করার ভিত্তি নেই। পশ্চিমারা ইসরায়েলি আগ্রাসনের পৃষ্ঠপোষকতা করছে। ওরাই প্রকৃত হুমকি।
আইএইএর প্রতিবেদনকে তিনি 'পক্ষপাতদুষ্ট' ও 'রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত' বলেও মন্তব্য করেন।

চীনের প্রতিনিধি ফু কং কিছুটা নমনীয় সুরে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার নিন্দা জানান এবং যুদ্ধবিরতির আহ্বান করেন, যদিও আইএইএ বা যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি কিছু বলেননি।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস জানান, “আমরা শুধু সংকটের দিকে এগোচ্ছি না, আমরা সেদিকে দৌড়ে যাচ্ছি।” তিনি আরও বলেন, “বিশ্বাসযোগ্য কূটনৈতিক সমাধান ছাড়া এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।”

তিনি ইরান ও ইসরায়েলকে সতর্ক করে বলেন, এই আগুন যদি একবার ছড়ায়, কেউ আর থামাতে পারবে না।

ইরানের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর তথ্য মতে, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ২২৪ জন নিহত এবং আড়াই হাজারের বেশি আহত হয়েছেন। অন্যদিকে, ইসরায়েল জানিয়েছে, ইরানের হামলায় কমপক্ষে ২৯ জন নিহত৯০০ জন আহত, যাদের অধিকাংশই সাধারণ মানুষ।

জাতিসংঘের পারমাণবিক সংস্থা IAEA জানিয়েছে, ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরির উপযোগী মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে, যা আন্তর্জাতিক চুক্তির লঙ্ঘন। যদিও তারা বলেছে, “আমরা নিশ্চিত নই, ইরান বোমা তৈরি করছে কি না।

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ভাষ্য, ইরান এখনো বোমা বানাচ্ছে না, তবে চাইলে এক বছরের মধ্যেই করতে পারবে।সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ বিষয়ে মন্তব্য করেন, “তাহলে আমার গোয়েন্দা সংস্থাগুলোই ভুল করছে।

জেনেভায় ইরান ও ইউরোপীয়দের আলোচনায় কোনও অগ্রগতি হয়নি। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ইসরায়েল যদি আগ্রাসন বন্ধ না করে, তাহলে কোনো গঠনমূলক আলোচনা সম্ভব নয়।

এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক রাজনীতি এক চূড়ান্ত উত্তেজনার কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে। মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়া যুদ্ধ শুধু দুই দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়—এর ঢেউ লেগে যাচ্ছে ওয়াশিংটন, মস্কো, লন্ডন, বেইজিং—সবখানে।

এই উত্তাপ যদি আরেকটু বাড়ে, তাহলে এক ভয়ংকর যুদ্ধের দিকে বিশ্ব গড়িয়ে যাবে, যেখানে কূটনীতি আর কাজ নাও করতে পারে।

কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি