close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

নগদ সিন্ডিকেটের মূল কারিগর কে?

Abdullah Al Mamun avatar   
Abdullah Al Mamun
এই ছায়া সাম্রাজ্য ভেঙে না দিলে নগদ শুধু ধ্বংসের দিকে নয়, দেশের ডিজিটাল অর্থনীতির প্রতি জনগণের আস্থাও চিরতরে হারাবে।..

নগদ এখন আর কেবল একটি মোবাইল ব্যাংকিং সেবা নয়—এটি হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় পরিচালিত এক ছায়া সাম্রাজ্য, যার মূল কারিগর হিসেবে উঠে আসছে এক রহস্যময় নাম: নাহিদ ইসলাম। রাষ্ট্রীয় দপ্তরের সাবেক উপদেষ্টা হিসেবে পরিচিত এই ব্যক্তি বর্তমানে নগদের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতা, নিয়ন্ত্রণ, ছাঁটাই-পদোন্নতি, এমনকি অফিসের মূল চেয়ারের উপরও অদৃশ্যভাবে রাজত্ব করছেন—সরাসরি নিজে না থেকেও।

একসময়কার আইসিটি উপদেষ্টার পরিচিত ‘বিশেষ সহকারী’ হিসেবে পরিচিত নাহিদ ইসলাম বর্তমানে নগদ নামক বিশাল আর্থিক সেবাপ্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি। কিন্তু তিনি কোনো কর্মকর্তা নন, তাঁর নাম নেই কোনো নিয়োগপত্রে, নেই কাগজে-কলমে পদের বিবরণ। তবুও নগদের প্রতিটি বড় সিদ্ধান্ত, কাদের ছাঁটাই হবে, কে পদোন্নতি পাবে, কার অ্যাক্সেস বন্ধ হবে—সবই ঠিক হচ্ছে তাঁর নির্দেশে।

নাহিদের সবচেয়ে কাছের মানুষদের একজন আতিক মোর্শেদ বর্তমানে নগদের সিইও কক্ষ দখল করে অফিস করছেন। তিনি নগদের কোনো দায়িত্বে নেই, কিন্তু কর্মীরা তাকেই এখন "ব্যবস্থাপনা" মনে করে। আতিক তাঁর স্ত্রীসহ একাধিক আত্মীয়কে নগদে চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন। এখন তাঁর কথাই ফাইনাল—তাঁর পেছনে নাহিদের ‘রহস্যময় শক্তি’।

নগদের সাবেক সিইও তানভীর এ মিশুক যেদিন বিদেশে পালান, তার পরদিন থেকেই অফিসে নাহিদের লোকদের সরাসরি পদোন্নতি, ছাঁটাই, নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ শুরু হয়। এটি কোন কাকতালীয় ঘটনা নয়, বরং পরিকল্পিত ক্ষমতা হস্তান্তরের ফল। তানভীর যেন মঞ্চ ছেড়ে দিলেন, আর পর্দার আড়ালে ঢুকে গেলেন নাহিদ।

নাহিদ ইসলাম যে শুধু ব্যক্তিগতভাবে নগদ নিয়ন্ত্রণ করছেন তাই নয়, বরং তিনি একটি পুরো ‘নাহিদ-সিন্ডিকেট’ গড়ে তুলেছেন।
এই সিন্ডিকেটের বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:

  • সাংবাদিক ও গণমাধ্যমে প্রভাব বিস্তার: নাহিদের ঘনিষ্ঠ কিছু মিডিয়া কর্মীর মাধ্যমে জনমত নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চলছে।

  • আইটি ও ফিন্যান্স বিভাগে বিশ্বস্তদের বসানো: যেন কাগজপত্র ও ডেটা তার ইচ্ছামতো চলে।

  • বিদেশে বসে নিয়ন্ত্রণ করা অদৃশ্য সিইও: সাফায়েত আলম নামে যিনি বিদেশে আছেন, তিনিও নাহিদের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে আছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

  • বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে চাপ: নিয়মিতভাবে কনফ্লিক্ট তৈরি করে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রকদের বিতাড়নের চেষ্টা চলছে।

এই জোট শুধু নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে না, বরং পূর্বের তথ্য মুছে ফেলার মাধ্যমে কেলেঙ্কারি গোপন করছে। কোটি কোটি টাকার ভুয়া ইভেন্ট বিল তৈরি করে নগদের অর্থ লোপাট করা হয়েছে।
ডেটাবেজে হস্তক্ষেপ, ভুয়া কনট্রাক্টর, এবং ‘ইতিহাস মোছা’র মাধ্যমে ভবিষ্যতের যেকোনো তদন্ত ব্যর্থ করতে চাইছে তারা।

নাহিদ ইসলামের মতো অদৃশ্য নায়ক যখন একটি অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছেন অথচ কোনো প্রতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি বা আইনি কর্তৃত্ব ছাড়াই—তখন সাধারণ গ্রাহকের টাকা কতটা নিরাপদ, এই প্রশ্নের উত্তর এখন আর তাত্ত্বিক নয়, এটি বাস্তব শঙ্কা।

নাহিদ ইসলামের চরিত্র বাংলাদেশের আধুনিক ইতিহাসে এক নতুন ধরনের চিত্র তুলে ধরে। তিনি একজন ‘ছায়া প্রশাসক’—যিনি রাষ্ট্রীয় দপ্তরের পরিচয়ে গড়ে তুলেছেন একটি ‘ডিজিটাল বেহেমথ’। এই ছায়া সাম্রাজ্য ভেঙে না দিলে নগদ শুধু ধ্বংসের দিকে নয়, দেশের ডিজিটাল অর্থনীতির প্রতি জনগণের আস্থাও চিরতরে হারাবে।

Ingen kommentarer fundet