ঢাবি ছাত্রশিবির সভাপতি ফরহাদ জানালেন, আন্দোলনের সময় নেটওয়ার্ক বন্ধের আগেই বিকল্প সিম ও ফোন প্রস্তুত রাখেন তাঁরা। সরকারের দমন-পীড়নের মুখে কীভাবে গোপনে আন্দোলন চালিয়ে গেছেন—তা জানালেন বিশদভাবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সভাপতি ফরহাদ সম্প্রতি এক বিস্ময়কর সাক্ষাৎকারে নয় দফা আন্দোলনের নেপথ্য বাস্তবতা ও গোপন কৌশল প্রকাশ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, কীভাবে সরকার নেটওয়ার্ক বন্ধ করবে তা আগেই আঁচ করেছিলেন তারা, এবং সেই অনুযায়ী বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলেন। আন্দোলন সফল করার এই গভীর প্রস্তুতি ও কৌশল আজ অনেকে জানতেন না।
ফরহাদ বলেন, “নেটওয়ার্ক বন্ধ হওয়ার ১০-১২ দিন আগেই আমাদের কাছে তথ্য আসে, সরকার এমন কিছু করতে পারে। অতীতের আন্দোলনের অভিজ্ঞতা আমাদের এই সতর্কতা দিয়েছে।” সেই আগাম তথ্যের ভিত্তিতেই তারা একটি বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে তোলেন। একজন সিনিয়র নেতার সহায়তায় ঢাকা ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মুরব্বিদের নামে সিম রেজিস্ট্রেশন করে নতুন মোবাইল ফোন সংগ্রহ করা হয়।
আন্দোলনের ৩-৪ দিন আগে ফরহাদ নিজেই সেই ফোন ও সিম গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের হাতে তুলে দেন। তিনি বলেন, “নেটওয়ার্ক বন্ধ হওয়ার পরও আমরা থামিনি। ওই বিকল্প ডিভাইস আমাদের সবচেয়ে বড় সহায় হয়ে দাঁড়ায়।
নয় দফা দাবি ঘোষণার পর পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে ওঠে। ফরহাদ জানান, “নাহিদ ভাইয়ের সাথে নিয়মিত অফলাইনে যোগাযোগ হতো। কেউ দায়িত্ব থেকে পিছিয়ে যায়নি।” কঠোর সরকারী নিয়ন্ত্রণ ও নিপীড়নের মধ্যেও আন্দোলন চালিয়ে যেতে তারা যেসব অফলাইন কৌশল অবলম্বন করেন, তা ছিল সুপরিকল্পিত।
ফরহাদের ভাষায়, “আমরা শহীদ না হলেও, প্রতিটি পদক্ষেপ প্রাণ দিয়ে নিয়েছি। আমাদের অনেক ভাই-বোন শহীদ হয়েছেন। কেউ কেউ আজও হাসপাতালে।
তিনি বলেন, “ইতিহাসের সত্য বলাটা জরুরি। যারা ঘটনাগুলোর প্রত্যক্ষ সাক্ষী, তাদের দায়িত্ব ইতিহাস বিকৃতি রোধ করা।” ইতিহাস যেমন ভুলে থাকে না, তেমনি প্রশ্ন তোলে—এই বার্তাই দিতে চাইলেন তিনি।
তার মতে, এই আন্দোলন শুধুমাত্র নয় দফা দাবির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। এটি ছিল বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, সাজানো নির্বাচন এবং ফ্যাসিবাদী দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে একটি সময়োপযোগী প্রতিবাদ।
ফরহাদ জানান, আন্দোলনের শুরু থেকেই (জুন মাসের প্রথম রাত থেকে) পরিকল্পনা করে কৌশল নির্ধারণ করা হয়। বিভিন্ন ক্যাম্পাস, ছাত্র সংগঠন ও দিকনির্দেশকদের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে ‘কফিন মিছিল’, ‘গায়েবি জানাজা’, ‘নয় দফা’ ইত্যাদি কর্মসূচি সাজানো হয়।
এই আন্দোলন ছিল বহু সংগঠনের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস। ফরহাদ বারবার উল্লেখ করেন, তিনি নিজে কোনো ‘ক্রেডিট’ নেননি। “এটি ছিল জনগণের আন্দোলন। আমাদের একার কৃতিত্ব নয়,” বলেন তিনি।
ফরহাদ শেষ কথায় বলেন, “আল্লাহর বিশেষ রহমত ছাড়া এই আন্দোলন এতদূর আসতো না। আমরা শুধু আমাদের জায়গা থেকে দায়িত্ব পালন করেছি।” এই বক্তব্যে আন্দোলনের প্রতি তার দায়বদ্ধতা ও নীরব আত্মত্যাগের পরিচয় স্পষ্ট হয়ে উঠে।