close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

নেতানিয়াহুর সঙ্গে ইউনূসের করমর্দন – জানুন আসল সত্য

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
নেট দুনিয়ায় তোলপাড়—ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ড. ইউনূসের করমর্দন! কিন্তু এই ভাইরাল ছবির পেছনে যে ভয়ানক প্রতারণা লুকিয়ে আছে, তা জানলে আপনি চমকে উঠবেন। একের পর এক গুজব, মিথ্যে তথ্য, আর ভুয়া ফটোকার্ড –..

ভাইরাল গুজবের শিকার ড. ইউনূস: আসল গল্প যা অনেকেই জানেন না

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে শুরু হওয়া ইসরাইলের দমন-পীড়ন এখন রীতিমতো গণহত্যায় রূপ নিয়েছে। হাজারো মানুষের মৃত্যু আর প্রতিদিনের ধ্বংসযজ্ঞ সামাজিক মাধ্যমে দারুণ প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। এই প্রেক্ষাপটেই বারবার সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে কিছু বিভ্রান্তিকর দাবি, যার অন্যতম শিকার হয়েছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

গুজব ছড়ানো হয়েছে, তিনি নাকি ইসরাইলকে ১০০ কোটি টাকা সহায়তা দিয়েছেন! আবারও ভাইরাল হয়েছে এক সম্পাদিত ছবি, যেখানে দেখা যাচ্ছে ইউনূস করমর্দন করছেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে। কিন্তু বাস্তবতা হলো—এই সব দাবি ভুয়া, সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং ডিজিটাল প্রযুক্তির অপব্যবহার।


ছবির ভেতরের প্রতারণা: করমর্দনের ভাইরাল ছবিটি কীভাবে বানানো হয়েছে?

সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া একটি ছবিতে দাবি করা হচ্ছে, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এবং করমর্দন করেছেন। তবে রিউমর স্ক্যানারের তদন্তে জানা যায়, ছবিটি আসলে ২০২৩ সালের একটি আসল ছবির ডিজিটালি পরিবর্তিত সংস্করণ।

মূল ছবিতে নেতানিয়াহুর কোনো উপস্থিতিই ছিল না। সেটি ছিল পর্তুগালের প্রেসিডেন্ট মার্সেলো রেবেলো দ্য সুজার সঙ্গে ইউনূসের করমর্দনের ছবি। সেই ছবির উপর নেতানিয়াহুর মুখ বসিয়ে ফটোশপ করে ভুয়া প্রচারণা চালানো হয়।

আরও একটি ভাইরাল ছবির পেছনের গল্পও এমনই। সেখানে ইউনূসের ছবি নেয়া হয়েছে ২০২৩ সালের ১১ মে ইতালির রাষ্ট্রপতি সার্জিও ম্যাটারেলার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তোলা একটি ছবির ফ্রেম থেকে। অপরদিকে, নেতানিয়াহুর অংশটি ২০১৯ সালে সামোয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ থেকে নেয়া হয়। এরপর দুটো ভিন্ন ছবিকে এক করে প্রচার করা হয় ইউনূস-নেতানিয়াহু সাক্ষাতের মিথ্যা দাবি।


গণমাধ্যমের নাম ভাঙিয়ে ভুয়া ফটোকার্ড

আরেকটি বড় গুজব তৈরি করা হয়েছে যমুনা টেলিভিশনের নাম ভাঙিয়ে। “ইসরাইলকে মনোসমর্থন দেওয়ায় ড. ইউনূসকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন নেতানিয়াহু”—শিরোনামে একটি ফটোকার্ড ইন্টারনেটে ছড়ানো হয়, যার তারিখ ছিল ০৩ অক্টোবর, ২০২৪।

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, যমুনা টিভি এমন কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। বরং যমুনা টিভির পুরনো একটি ফটোকার্ড ডিজিটালভাবে পরিবর্তন করে এই ভুয়া কার্ড বানানো হয়েছে।

এই ধরনের মনগড়া ফটোকার্ড ডিজাইন করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে, যা সাংবাদিকতার নীতিমালার পরিপন্থী এবং সমাজে বিভ্রান্তি ছড়ানোর বড় হাতিয়ার।


বিকৃত বক্তব্য: “ইসরাইল আত্মরক্ষার অধিকার রাখে” – কে বলেছিলেন আসলে?

আরেকটি মনগড়া দাবি ছড়ানো হয়, যেখানে ইউনূস নাকি বলেছেন, “ইসরাইল তার আত্মরক্ষার অধিকার রাখে।” এই মিথ্যা বক্তব্য ফটোকার্ড আকারে ছড়ানো হয় ২০২৩ সালের ৫ অক্টোবর দুদক কার্যালয়ে ড. ইউনূসের সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপের পর।

কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ইউনূস এমন কোনো মন্তব্য করেননি। রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মূল বক্তব্য পরিবর্তন করে তা সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়। বাস্তবে একই ধরনের মন্তব্য করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং তার প্রশাসনের কর্মকর্তারা।


কমেন্ট, ইনবক্স ও ছবিতে ভাইরাল হচ্ছে ভুয়া তথ্য

শুধু পোস্টের মাধ্যমেই নয়, এখন ভুয়া ছবিগুলো ছড়ানো হচ্ছে ফেসবুক কমেন্ট ও ইনবক্সেও। আর ফ্যাক্টচেক হওয়ার পরেও অনেকে জেনেশুনে এগুলো শেয়ার করে যাচ্ছেন, যেন অপপ্রচার চালানোই উদ্দেশ্য।

এসব ছবি একবার ভাইরাল হলে তা থামানো খুব কঠিন হয়ে পড়ে। মানুষ পুরনো ছবিকেই নতুন ঘটনা হিসেবে ধরে নেয় এবং একই ছবি বছরের পর বছর পুনরায় ভাইরাল হয় নতুন প্রেক্ষাপটে।


তথ্য যাচাই করুন, গুজবের ফাঁদে পা দেবেন না

ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে ছড়ানো এসব গুজব কেবল বিভ্রান্তিকর নয়, বরং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব দাবি ভুয়া, ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ছড়ানো অপতথ্য।

সামাজিক মাধ্যমে যেকোনো তথ্য শেয়ার করার আগে একটি মাত্র কাজ—তথ্য যাচাই। সত্য জানুন, গুজব প্রতিরোধ করুন।


সতর্ক থাকুন, শেয়ার করার আগে ভেবে দেখুন — আপনি কী প্রচার করছেন?

No comments found