নাতনিকে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় নানাকে কুপিয়ে হত্যা

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
মানিকগঞ্জে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদে প্রাণ গেল এক নিরীহ নানার। নাতনির সম্মান রক্ষায় থানায় অভিযোগ করাতেই দুর্বৃত্তদের রোষানলে পড়েন আজগর মিয়া। প্রকাশ্যে কুপিয়ে তাকে হত্যা করে বখাটেরা। নৃশংস এই ঘটনাটি গোটা এল..

নাতনির সম্মান রক্ষা করতে গিয়ে খুন হতে হলো এক নিরীহ নানাকে। মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার রায়পুর গ্রামে ঘটে যাওয়া এই মর্মান্তিক ঘটনা পুরো এলাকায় শোক ও ক্ষোভের ছায়া ফেলেছে। ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ জানানোই যেন আজগর মিয়ার অপরাধ হয়ে দাঁড়ায়।

ঘটনার সূত্রপাত হয় সোমবার দুপুরে, যখন পঞ্চাশোর্ধ্ব মুদি দোকানি আজগর মিয়া স্থানীয় বখাটে আলামিনের বিরুদ্ধে সিংগাইর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, আলামিন নামের এক যুবক বারবার তার নাতনিকে রাস্তা ঘাটে যাওয়া-আসার পথে উত্ত্যক্ত করত। বিষয়টি আজগর মিয়া মেনে নিতে না পেরে থানার দ্বারস্থ হন।

পুলিশ অভিযোগ পাওয়ার পর পরিদর্শনে গেলে এলাকায় বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। পুলিশ চলে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনা নেয় ভয়াবহ রূপ। মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে আলামিন তার সঙ্গে আরও কয়েকজন সন্ত্রাসী নিয়ে আজগরের ওপর অতর্কিতে হামলা চালায়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপর্যুপরি কোপানো হয় আজগরের শরীরে।

স্থানীয়রা রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নিয়ে যায়। কিন্তু তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় দ্রুত তাকে পাঠানো হয় ঢাকার সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে পৌঁছানোর পর রাত ১০টার দিকে চিকিৎসকরা আজগর মিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন।

এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. রাকিব আল মেহেদী শুভ বলেন, “রোগীকে মৃত অবস্থায় আনা হয়। শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের গভীর আঘাত ছিল। সম্ভবত অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই তার মৃত্যু হয়েছে।”

নিহতের শ্যালক নজরুল জানান, “আমার ভগ্নীপতি শুধুমাত্র নাতনির সুরক্ষার জন্য থানায় গিয়েছিলেন। কোনো অপরাধ করেননি। কিন্তু আলামিন বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি। সে প্রতিশোধ নিতে গিয়েই আজগরকে মেরে ফেলল।”

ঘটনার পরপরই এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়রা দ্রুত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে খবর দেয়। সাভার মডেল থানার ওসি জুয়েল মিঞা জানান, “আমরা খবর পেয়ে দ্রুত হাসপাতালে যাই। নিহতের মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে তা সিংগাইর থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।”

তিনি আরও বলেন, “এখনো পর্যন্ত কেউ আটক হয়নি, তবে আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি। অভিযুক্তদের ধরতে অভিযান শুরু হয়েছে।”

এ ঘটনায় এলাকায় ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষ এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। স্থানীয়রা বলছেন, “নিরাপত্তার জন্য থানায় অভিযোগ করেই যদি জীবন দিতে হয়, তবে মানুষ যাবে কোথায়?”

এই ঘটনায় আবারও প্রশ্ন উঠেছে—দেশে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গিয়ে কেন পরিবারগুলোকে এত বড় মূল্য দিতে হচ্ছে? এবং প্রশাসনের ভূমিকা কী হওয়া উচিত এমন সংকটময় মুহূর্তে?


আজগর মিয়ার রক্ত যেন বৃথা না যায়—এই দাবি আজ শুধু একটি পরিবারের নয়, পুরো এলাকার মানুষের। প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ, এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার হোক এবং অপরাধীরা যেন বুঝতে পারে, অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে তার পরিণতি হবে না মৃত্যু, বরং অপরাধীদের বিচার।

Nema komentara