নারায়ণগঞ্জে টিস্যু বিক্রেতা বেলাল হোসেন হত্যা মামলায় আদালত এক আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও আরও দুইজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। রায় ঘোষণার সময় একজন আসামি উপস্থিত থাকলেও বাকি দুজনকে ধরতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জে আলোচিত টিস্যু বিক্রেতা বেলাল হোসেন হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেছে আদালত। মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আমিনুল হক এই রায় ঘোষণা করেন। রায়ে এক আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং আরও দুই আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
আদালতের রায়ের বিবরণ অনুযায়ী, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হলেন সিদ্ধিরগঞ্জের বাগপাড়া এলাকার মো. নাদির ওরফে নাছির (৩৫), তিনি মো. সাহাবুদ্দিনের ছেলে। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন মৌচাক এলাকার মৃত ইব্রাহীম খলিলের ছেলে মো. মানিক মিয়া (৪১) এবং সানারপাড় এলাকার মোশারফ হোসেন (২৫)।
রায় ঘোষণার সময় আসামি মোহন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তবে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নাছির ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত মানিক মিয়া পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আদালত পুলিশের পরিদর্শক কাইউম খান। রায়ে আরও উল্লেখ করা হয়, আসামিদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডও দেওয়া হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, নিহত বেলাল হোসেন কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার প্রয়াত আব্দুর রশিদের ছেলে। জীবিকার প্রয়োজনে তিনি সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় ভাড়া বাসায় থেকে খাবার হোটেলগুলোতে টিস্যু বিক্রি করতেন।
রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর নজরুল ইসলাম মাসুম বলেন, ২০২২ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে সানারপাড় এলাকায় ছিনতাইয়ের শিকার হন বেলাল। ছিনতাইকারীরা তার কাছ থেকে টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনতাইয়ের চেষ্টা করলে বেলাল বাধা দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আসামিরা তাকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় বেলালকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এই ঘটনায় নিহতের ভগ্নিপতি মো. কাজী জাহিদ বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামি করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে পুলিশ ঘটনাটি খতিয়ে দেখে তিন আসামিকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। দীর্ঘ বিচারিক কার্যক্রম শেষে আদালত মঙ্গলবার রায় ঘোষণা করে।
রায়ের পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, এই রায়ের মধ্য দিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। নিহতের পরিবারও সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। তবে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তারা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।
এই হত্যাকাণ্ড শুধু সিদ্ধিরগঞ্জ নয়, পুরো নারায়ণগঞ্জ জেলাজুড়ে আলোচিত হয়ে ওঠে। কারণ জীবিকার তাগিদে সংগ্রামরত এক সাধারণ মানুষকে দিনের আলোয় ছিনতাইকারীরা নির্মমভাবে হত্যা করে পালিয়ে যায়। আদালতের এই রায় এলাকায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। স্থানীয়রা মনে করছেন, এ ধরনের রায় অপরাধীদের জন্য বড় বার্তা হয়ে থাকবে।