নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে দুদিনের রি'মান্ড দিয়েছেন আদালত..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
নারায়ণগঞ্জের সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে আলোচিত মিনারুল হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হলে, বিচারক দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলা এ..

নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি ও প্রশাসনে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় ভূমিকা পালনকারী সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে বহুল আলোচিত মিনারুল হত্যা মামলায় আদালত রিমান্ডে পাঠিয়েছেন। রোববার (২৫ মে) বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. নূর মহসীন এই রিমান্ডের আদেশ দেন। আদালতে তার বিরুদ্ধে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হলেও শুনানি শেষে দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।

এই মামলাটি মূলত সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় দায়েরকৃত মিনারুল হত্যা সংক্রান্ত, যা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সংঘটিত হয়েছিল। কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক মো. কাইউম খান জানান, ওই সময়কার সংঘর্ষে নিহত হন ছাত্রনেতা মিনারুল, যার তদন্তে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম উঠে আসে। এদের মধ্যেই আইভী অন্যতম।

সেলিনা হায়াৎ আইভী নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের তিনবারের নির্বাচিত মেয়র ছিলেন। তার জনপ্রিয়তা, প্রশাসনিক দক্ষতা এবং রাজনৈতিক প্রভাব দীর্ঘদিন ধরে আলোচনার বিষয়। কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডে তার নাম উঠে আসায় পরিস্থিতি নাটকীয় মোড় নিয়েছে। অনেকে একে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বললেও তদন্ত সংস্থার দাবি, তারা প্রমাণের ভিত্তিতে আগাচ্ছেন।

এদিকে, আইভীর গ্রেফতার এবং রিমান্ডের খবরে নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তার দলীয় সহকর্মীরা এই গ্রেপ্তারকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং রাজনৈতিক হয়রানি বলেও দাবি করছেন। দলের স্থানীয় নেতারা বলছেন, আইভী একজন জনপ্রিয় ও সৎ জনপ্রতিনিধি, তাকে হয়রানি করা হলে রাজপথে নেমে প্রতিবাদ করা হবে।

তবে, তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মামলা ও অভিযোগের ভিত্তিতে যে কেউই আইনের আওতায় আসতে পারে। সাবেক মেয়র হওয়াতে কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে এবং নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমেই সত্য বেরিয়ে আসবে।

এই ঘটনার জেরে নারায়ণগঞ্জ শহরজুড়ে সাধারণ মানুষের মাঝেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ বলছেন, “যদি তিনি দোষী হন তবে অবশ্যই বিচার হওয়া উচিত”, আবার কেউ বলছেন, “আইভী সব সময় জনগণের পাশে ছিলেন, এটা তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত।”

সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এখন অপেক্ষা করছেন তদন্তের অগ্রগতির দিকে। আইভীর পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি, তবে তার আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিলের জন্য উচ্চ আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

এই মামলা ও রিমান্ডের মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে নতুন করে উত্তাপ ছড়িয়েছে। এমন এক সময় এই ঘটনা ঘটল, যখন সামনে রয়েছে জাতীয় নির্বাচন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই গ্রেপ্তার ও মামলার প্রভাব শুধু নারায়ণগঞ্জ নয়, বরং দেশের জাতীয় রাজনীতিতেও ছড়িয়ে পড়বে।

আইভীর বিরুদ্ধে রিমান্ড মঞ্জুরের এই ঘটনা নিঃসন্দেহে একটি তাৎপর্যপূর্ণ মোড়। তদন্ত কতটা নিরপেক্ষভাবে পরিচালিত হয় এবং আইনি প্রক্রিয়া কোথায় গিয়ে শেষ হয়, সেটিই এখন দেখার বিষয়। একদিকে আইন ও বিচার, অন্যদিকে রাজনৈতিক বাস্তবতা — দুইয়ের সংঘাতে একটি বড় পরীক্ষা অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য।

لم يتم العثور على تعليقات