ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরজুড়ে আবারও তীব্র দমন-পীড়ন চালাচ্ছে ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) ভোরে নাবলুস শহরের পুরাতন অংশে চালানো অভিযানে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত ফিলিস্তিনি সাংবাদিক সামের খুওয়াইরাকে তার নিজ বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায় সেনারা। এখন পর্যন্ত জানা যায়নি, তাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
সামের খুওয়াইরা একাধারে কুদস টেলিভিশন, আলজাজিরা, মিডল ইস্ট আই, এবং আনাদোলু এজেন্সির হয়ে কাজ করেছেন। তিনি নাবলুস অঞ্চলে দখলদার বাহিনীর অব্যাহত নিপীড়নের বিরুদ্ধে নির্ভীকভাবে প্রতিবেদন করে আসছিলেন। বহুবার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেছেন ফিলিস্তিনিদের ওপর চালানো নিষ্ঠুরতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্র। এ কারণেই তিনি ফিলিস্তিনে একজন সাহসী সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
অভিযানকালে ইসরায়েলি বাহিনী আচমকাই সামেরের বাড়িতে প্রবেশ করে এবং তাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। কুদস নিউজ নেটওয়ার্ক জানিয়েছে, সামেরকে তুলে নেওয়ার একটি ভিডিও তারা সংগ্রহ করেছে এবং সেটি প্রকাশও করেছে। কিন্তু কোথায় নেওয়া হয়েছে কিংবা কী অবস্থায় রয়েছেন তিনি, সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
এটাই শেষ নয়—সেই একই সময় ইসরায়েলি সেনারা হামলা চালায় নাবলুসের বালাতা শরণার্থী শিবিরে। ঘরবাড়ি ভাঙচুর, বাসিন্দাদের জোরপূর্বক উচ্ছেদ এবং চোখ বেঁধে বেশ কয়েকজনকে ধরে নিয়ে যাওয়ার মতো তাণ্ডব চালায় তারা।
পুরাতন শহরের আরও একাধিক স্থানে তল্লাশি চালানো হয়। বিশেষ করে আজাজ মসজিদ ও গ্রেট সালাহ আল-দীন মসজিদ ঘিরে ফেলে সেনারা। সামরিক যান ও স্থলবাহিনী মোতায়েন করে পুরো এলাকাকে অবরুদ্ধ করে ফেলা হয়। এছাড়া আকাবা পাড়া এলাকায় এক ফিলিস্তিনি বাড়িতেও অভিযান চালানো হয়।
স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, ওই অভিযানে সেনাদের আচরণ ছিল বিশেষভাবে আগ্রাসী। যদিও বিস্তারিত তথ্য এখনও হাতে আসেনি।
এর আগে গত মাসেও ইসরায়েলি বাহিনী পুরাতন শহরের বেশ কয়েকটি মসজিদে তল্লাশি চালায় এবং লুটপাটের অভিযোগ ওঠে। এই ধরণের টানা অভিযানের কারণে পশ্চিম তীরজুড়ে বাড়ছে উদ্বেগ ও আতঙ্ক।
এই যখন পশ্চিম তীরের চিত্র, তখন গাজা আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। গত ৯ এপ্রিল, গাজার বিভিন্ন আবাসিক ভবনে বোমা বর্ষণ করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। এতে অন্তত ৩৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৫৫ জন। আহতদের অনেকেই গুরুতর অবস্থায় রয়েছেন, যাদের অনেকের অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হলেও পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবে তা সম্ভব হচ্ছে না।
এ ছাড়া ঘটনার পর থেকে আরও ৮০ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে। তাদের অনেকেই ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় উদ্ধার যন্ত্র না থাকায় উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে। দেরি হলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় উদ্ধারকর্মীরা।
ফিলিস্তিনে স্বাধীন সাংবাদিকতা প্রতিদিনই নতুন করে হুমকির মুখে পড়ছে। সামের খুওয়াইরার মতো সাংবাদিকদের ওপর হামলা তা আরও স্পষ্ট করে তুলছে। আন্তর্জাতিক মহলের নীরবতা এবং বিচারহীনতার সুযোগেই দিন দিন আরও ভয়ংকর হয়ে উঠছে দখলদার বাহিনী।