মৃত্যুর পর দেশের মাটিতেই ঠাঁই চান শেখ হাসিনা

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়াল শেখ হাসিনার ‘মৃত্যুর পর আজিমপুরে কবর চান’ — এমন একটি আবেগঘন ফটোকার্ড। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন! অনুসন্ধানে উঠে এসেছে ভয়াবহ ডিজিটাল জালিয়াতির চিত্র। জানুন আসল ঘটনা।..

মৃত্যুর পর আজিমপুরে দাফনের আকুতি জানালেন শেখ হাসিনা— এমন দাবি ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কিন্তু সত্যিই কি এমন কিছু বলেছেন তিনি?
গত কয়েক দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে একটি ফটোকার্ড, যেখানে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, "আমি মারা গেলে নিজের দেশে আজিমপুর কবর স্থানে হলেও আমাকে দাফন করিও।" দাবি করা হয়, এটি মূলধারার জনপ্রিয় টেলিভিশন চ্যানেল একাত্তর টিভির সংবাদ ফটোকার্ড।

ভাইরাল হওয়ার পরপরই বিষয়টি নিয়ে জনমনে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। অনেকে আবেগে আপ্লুত হয়ে সেটি শেয়ার করতে থাকেন, আবার অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেন— সত্যিই কি এমন আবেগঘন কথা বলেছেন একসময়কার ক্ষমতাধর নেত্রী শেখ হাসিনা?

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে নামে ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা রিউমর স্ক্যানার। তারা বিষয়টির গভীরে গিয়ে ফটোকার্ডটির উৎস, ফন্ট, লোগো এবং কাঠামো বিশ্লেষণ করে যা সামনে নিয়ে আসে, তা রীতিমতো চমকে দেয়।

রিউমর স্ক্যানার জানায়, প্রকৃতপক্ষে একাত্তর টিভি এমন কোনো ফটোকার্ড তৈরি করেনি। মূলত তাদের একটি ভিন্ন সংবাদের ফটোকার্ডকে ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে এডিট করে শেখ হাসিনার কবরস্থানের মন্তব্য জুড়ে দেওয়া হয়।

আসল ফটোকার্ডে ছিল, "শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত শুনানির জন্য অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ" — এই সংবাদটি ১৯ জুন, ২০২৫ তারিখে একাত্তর টিভির ফেসবুক পেজে পোস্ট করা হয়।

সেই ফটোকার্ডটির গঠন, রং, লোগো, ছবি এবং তারিখ হুবহু মিলে যায় ভাইরাল হওয়া ভুয়া ফটোকার্ডটির সঙ্গে। কিন্তু ‘আজিমপুর কবরস্থানে দাফনের আকুতি’ সংবলিত ফন্ট ও লেখার বিন্যাসে স্পষ্ট পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।

এখানেই শেষ নয়। একাত্তর টিভির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত আসল সংবাদের কোথাও শেখ হাসিনার এমন মন্তব্যের কোনো উল্লেখ নেই।

একাত্তরের আসল রিপোর্টে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ছাত্রলীগ নেতা শাকিল আলম বুলবুলের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে শুনানি চলছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১-এর বিচারপতি মো. গোলাম মূর্তজার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ অ্যামিকাস কিউরি (আদালত বন্ধু) হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামানকে নিযুক্ত করেন।

১৯ জুন দেওয়া এ আদেশের আলোকে আগামী ২৫ জুন মামলার পরবর্তী শুনানি নির্ধারণ করা হয়। প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম জানান, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েও অভিযুক্তরা হাজির না হওয়ায় স্বচ্ছ বিচারের স্বার্থে অ্যামিকাস কিউরির মত শোনা হবে।

এই ঘটনাটি আবারও প্রমাণ করে, সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো প্রতিটি তথ্য যাচাই না করে বিশ্বাস করা বিপজ্জনক। ডিজিটাল প্রযুক্তির অপব্যবহারে কোনো মূলধারার মিডিয়ার নাম ব্যবহার করে ভুল ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানো এখন সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশেষ করে রাজনৈতিক ও সংবেদনশীল বিষয়কে কেন্দ্র করে এ ধরনের গুজবের প্রবণতা বেশি দেখা যায়। এই ফটোকার্ডও তারই একটি উদাহরণ — যা না শুধু বিভ্রান্তি তৈরি করেছে বরং একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নাম ব্যবহার করে গণমানুষের আবেগকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে।

এই খবরের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায়, শেখ হাসিনা কোনোভাবেই আজিমপুর কবরস্থানে দাফনের আকুতি জানিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। বরং একাত্তর টিভির একটি বৈধ সংবাদ ফটোকার্ডকে বিকৃত করে ভুয়া দাবি ছড়ানো হয়েছে।

তাই পাঠকের প্রতি অনুরোধ, ভাইরাল কোনো তথ্য শেয়ার করার আগে তার সত্যতা যাচাই করুন, কারণ ভুল তথ্য বিশ্বাস করা শুধু আপনার নয়, সমাজের জন্যও ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হতে পারে।

Inga kommentarer hittades