close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

ম্যাকাওয়ের পর এবার লেমুর ‘হাওয়া’! গাজীপুর সাফারি পার্কে রহস্যজনক প্রাণী চুরি, প্রশ্নবিদ্ধ নিরাপত্তা..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
গাজীপুর সাফারি পার্ক যেন এখন চোরের স্বর্গরাজ্য! ম্যাকাও চুরির পর এবার রহস্যজনকভাবে গায়েব হলো তিনটি দুর্লভ আফ্রিকান লেমুর। চুরি হচ্ছে, মামলা হচ্ছে, কিন্তু উদ্ধার হচ্ছে না কিছুই!..

গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক যেন একের পর এক প্রাণী চুরির ঘটনায় রীতিমতো রহস্যময় ভুতুড়ে জায়গায় পরিণত হচ্ছে। গত বছর দুটি দুষ্প্রাপ্য ম্যাকাও পাখি চুরির ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার চুরি হলো তিনটি দুর্লভ আফ্রিকান লেমুর। এই চুরির ঘটনায় চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে পার্কের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও প্রশাসনিক দায়দায়িত্ব।

সাফারি পার্ক সূত্রে জানা গেছে, ২২ মার্চ দিবাগত রাতে পার্ক থেকে হঠাৎ করেই নিখোঁজ হয়ে যায় তিনটি লেমুর—যার মধ্যে দুটি শাবক এবং একটি প্রাপ্তবয়স্ক লেমুর ছিল। এ ঘটনায় রাতেই শ্রীপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। উদ্ধার তো দূরের কথা, তদন্তও যেন চলছে ঢিমেতালে।

এ বিষয়ে সাফারি পার্কের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, এই লেমুরগুলো পার্কে আনার পেছনে রয়েছে একটি রোমাঞ্চকর ইতিহাস। ২০১৮ সালের ৬ আগস্ট হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পাচারকালে উদ্ধার করা হয় লাভবার্ড, কাকাতুয়া, ম্যাকাও, ময়ুর এবং দুটি লেমুরসহ প্রায় ২০২ জোড়া বিপন্ন পাখি ও বন্যপ্রাণী। এসব প্রাণী পরবর্তীতে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের মাধ্যমে গাজীপুর সাফারি পার্কে হস্তান্তর করা হয়।

ওই দুটি লেমুর সাফারি পার্কে প্রথমবারের মতো সন্তান প্রসব করে। ২০২২ সালে একটি লেমুর মৃত্যুবরণ করলেও বাকি তিনটি সুস্থ অবস্থায় পার্কে থাকছিল। এবার সেই তিনটিও চুরি যাওয়ায় বর্তমানে পুরো লেমুর বেষ্টনী ফাঁকা হয়ে পড়েছে।

বন বিভাগের উদ্বেগ
বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, এই তিনটি লেমুর চুরির ফলে বাংলাদেশে আর কোথাও কোনো লেমুর অবশিষ্ট নেই। বিষয়টি শুধু দুঃখজনক নয়, বরং দেশের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে একটি বড় ধরনের ধাক্কা বলেই মনে করছেন পরিবেশবিদরা।

বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, “চুরির বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। ইতোমধ্যেই থানায় মামলা হয়েছে। খুব শিগগিরই আমরা এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে পারবো।”

বারবার চুরি, নেই জবাবদিহিতা
পার্ক সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, ২০২3 সালের ৫ আগস্টের পর থেকেই সাফারি পার্কে নানা ধরনের অব্যবস্থাপনা চোখে পড়ছে। বারবার দামী ও দুর্লভ প্রাণী চুরি হওয়া সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত কাউকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হয়নি।

গত বছরের নভেম্বরে চুরি হয় দুটি ম্যাকাও পাখি, এরপর ২০২৪ সালের ১৬ জানুয়ারিতে নিখোঁজ হয় একটি নীলগাই। এখন আবার লেমুর চুরি—সব মিলিয়ে প্রশ্ন উঠছে, এসব চুরির পেছনে কি পার্কের ভেতরের কোনো চক্র জড়িত?

থানার অবস্থান
শ্রীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জয়নাল আবেদিন বলেন, “আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। আশা করছি দ্রুত চুরি হওয়া লেমুরগুলোর সন্ধান এবং চোরদের শনাক্ত করা সম্ভব হবে।”

সংশ্লিষ্টদের উদ্বেগ
বন বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, পার্কের কিছু কর্মচারীর প্রতি সন্দেহ থাকলেও ওপর মহল থেকে কোনো জোরালো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এই ধরণের শৈথিল্যই চোরদের উৎসাহিত করছে বলে মনে করছেন অনেকেই।


 

গাজীপুর সাফারি পার্ক যেন এখন আর ‘নিরাপদ আশ্রয়’ নয়, বরং দুর্লভ প্রাণীদের জন্য ‘নিখোঁজ হওয়ার ঠিকানা’। প্রশাসনিক উদাসীনতা, দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও দায় এড়ানোর সংস্কৃতি চুরি ঠেকাতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হচ্ছে। এ অবস্থায় দেশের জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং দুর্লভ প্রাণী সংরক্ষণের জন্য জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।

कोई टिप्पणी नहीं मिली