ঢাকা, [১১ জুলাই]:
ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় সম্প্রতি এক সাধারণ ব্যবসায়ী সোহাগকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, যা দেশজুড়ে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। সোহাগকে চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানানোর পর প্রকাশ্য দিবালোকে এই নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটে। ঘটনাটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের আমির, যিনি বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বার্তায় তাঁর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
ফেসবুক পোস্টে জামায়াত আমির লেখেন, "মিটফোর্ডের ঘটনা বিদেশে অবস্থানরত থাকা অবস্থায় জেনে আমি সকল ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। এ কোন যুগ! কোন সমাজ! প্রকাশ্য দিবালোকে একজন ক্ষুদ্র, সাধারণ ব্যবসায়ীকে শুধু চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে শত শত মানুষের সামনে কতটা নির্মমভাবে হত্যা করা হলো!"
ঘটনাটিকে তিনি সভ্য সমাজের জন্য এক গভীর লজ্জা হিসেবে উল্লেখ করেন এবং নিহত সোহাগের পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান। তিনি বলেন, "হে ক্ষতিগ্রস্ত মজলুম পরিবার, আমরা তোমাদের কাছে লজ্জিত। হে ব্যবসায়ী ভাই সোহাগ, তোমার এই পরিণতি হওয়ার আগে সত্যিকারের কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারলাম না — এজন্য আমরা আন্তরিকভাবে লজ্জিত।"
জামায়াতের আমির তাঁর বার্তায় শুধুমাত্র ক্ষোভ প্রকাশেই থেমে থাকেননি, বরং তিনি দেশবাসীকে সামাজিকভাবে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। তিনি লিখেছেন, "হে সমাজ, জেগে উঠো! মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার প্রমাণ দাও। মনে রেখো — আজ তুমি কারো বিপদে চুপ থাকলে, আগামীকাল তোমার ওপর এর চেয়েও বড় বিপদ এলে, তখন তুমি কাউকে পাশে পাবে না। অতএব, ভয় ও সংকোচ উপেক্ষা করে আমাদেরকে সমস্ত অপরাধীদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতেই হবে।"
সোহাগ হত্যাকাণ্ড দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন ও নাগরিক সমাজে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং বিচার দাবি করছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জামায়াত আমিরের এই বার্তা দেশের জনগণকে সংঘবদ্ধ প্রতিরোধের আহ্বান জানানোর এক গুরুত্বপূর্ণ প্রয়াস। এটি শুধু একটি প্রতিক্রিয়া নয়, বরং দেশের নাগরিকদের মধ্যে নৈতিক সচেতনতা তৈরিরও একটি উদ্যোগ।
এই ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। নাগরিক সমাজ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলি দ্রুত ও স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
দেশে ক্রমবর্ধমান অপরাধ প্রবণতা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে সাধারণ মানুষের উদ্বেগ বাড়ছে। এই প্রেক্ষাপটে সোহাগ হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা জনমনে ভয়ের সঞ্চার করছে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারের দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করছে।