রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত শ্রমিকদের পরিবারকে সরকার দুই লাখ টাকা ও আহতদের পঞ্চাশ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শ্রম মন্ত্রণালয়।
রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত শ্রমিকদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে সরকার। নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে দুই লাখ টাকা এবং আহত শ্রমিকদের চিকিৎসার জন্য পঞ্চাশ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। বুধবার (১৫ অক্টোবর) এক সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের তহবিল থেকে এই আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে। এ ছাড়া, অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধান ও দায় নির্ধারণের জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব লস্কার তাজুল ইসলাম। সাত সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটি আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে বিস্তারিত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে বলে জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, দুর্ঘটনার জন্য কারা দায়ী, কীভাবে অগ্নিকাণ্ডটি ঘটেছে এবং এতে কতটুকু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে—এসব বিষয় যাচাই করে বিস্তারিত প্রতিবেদন দেবে কমিটি। আহত ও নিহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি এবং পরিদর্শন প্রক্রিয়ায় কোনো গাফিলতি ছিল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে। ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে প্রয়োজনীয় সুপারিশও করবে তদন্ত কমিটি।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাতে মিরপুরের রূপনগরে একটি পোশাক কারখানা এবং সংলগ্ন রাসায়নিক গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। দ্রুত ছড়িয়ে পড়া আগুনে মুহূর্তেই দগ্ধ হয়ে মারা যান অন্তত ১৬ জন শ্রমিক। অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একাধিক ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে ততক্ষণে পুড়ে ছাই হয়ে যায় গোটা ভবন এবং শ্রমিকদের জীবিকা নির্বাহের প্রধান উপকরণগুলো।
এই মর্মান্তিক ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম. সাখাওয়াত হোসেন। তিনি নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করে শোকাহত পরিবারগুলোর প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “মানবিক দিক বিবেচনায় সরকার নিহত ও আহতদের পাশে থাকবে। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
মিরপুরের এই অগ্নিকাণ্ড রাজধানীজুড়ে নতুন করে নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এলাকাবাসী জানিয়েছে, রাসায়নিক গুদামগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকা এবং অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জামের অভাবে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়রা আরও দাবি করেন, কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও নিয়ম না মানার কারণে এমন ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আগুন লাগার মুহূর্তে শ্রমিকরা ভেতরে কাজ করছিলেন। দ্রুত ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই বের হতে না পেরে আটকা পড়ে যান। স্থানীয়দের সহায়তায় কিছু শ্রমিককে উদ্ধার করা গেলেও অনেকে দগ্ধ হয়ে মারা যান।
এদিকে, অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিহতদের পরিবারের সদস্যরা এখনো প্রিয়জন হারানোর শোকে ভেঙে পড়েছেন। সরকারের আর্থিক সহায়তার এই ঘোষণা কিছুটা হলেও তাদের দুঃখ প্রশমনে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন স্থানীয়রা।
এই অগ্নিকাণ্ড আবারও মনে করিয়ে দিল—শিল্প এলাকাগুলিতে নিরাপত্তা ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা কতটা দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা এড়াতে গুদাম ও কারখানাগুলোর নিয়মিত পরিদর্শন, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সরঞ্জাম এবং শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা জরুরি।