রাজধানীর মিরপুরের শাহ আলম কেমিক্যাল গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১৬ জনের প্রাণহানির ঘটনায় সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সরকার। নিহতদের পরিবারে ২ লাখ ও আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে সহায়তা ঘোষণা করা হয়েছে।
রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর এলাকার শাহ আলম কেমিক্যাল গোডাউন এবং সংলগ্ন প্রিন্টিং কারখানায় মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১৬ জন শ্রমিকের মৃত্যুতে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ ও আহতদের অনেকেই এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এই মর্মান্তিক ঘটনায় দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিয়ে তদন্তে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করেছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
বুধবার (১৬ অক্টোবর) শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নিহত প্রতিটি শ্রমিকের পরিবারের হাতে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন থেকে ২ লাখ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। এছাড়া, আহতদের চিকিৎসার খরচে সহায়তা হিসেবে ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান প্রদান করা হবে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম. সাখাওয়াত হোসেন এই দুর্ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন, “এটি এক মর্মান্তিক ট্র্যাজেডি। আমরা নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা প্রত্যাশা করছি।” তিনি শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এই ঘটনায় সঠিক তদন্তের জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব লস্কার তাজুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেবে।
তদন্ত কমিটিকে বলা হয়েছে, তারা অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধান, দায়ীদের শনাক্তকরণ, ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণ তালিকা প্রণয়ন এবং কারখানায় ঝুঁকি নিরূপণ ও ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর সুপারিশ করবে। এছাড়াও, নিরাপত্তা পরিদর্শনে কোনো গাফিলতি ছিল কি না, তা বিস্তারিতভাবে খতিয়ে দেখা হবে।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, কেমিক্যাল ও দাহ্য পদার্থের মজুদ থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের প্রায় চার ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে আগুন লাগার সঠিক কারণ এখনো নিশ্চিত নয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গোডাউনের অভ্যন্তরে যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না এবং জরুরি বহির্গমন পথও ছিল অপর্যাপ্ত।
শ্রম অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার পরই শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় প্রশাসন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। উদ্ধার কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর হাতে দ্রুত আর্থিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে শিল্প এলাকায় কেমিক্যাল ও দাহ্য পদার্থ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে কঠোর নিরাপত্তা নীতিমালা বাস্তবায়ন করা জরুরি। পাশাপাশি নিয়মিত পরিদর্শন, নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ ও জরুরি প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে।
এই অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারানো শ্রমিকদের পরিবারের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে রূপনগর এলাকা। স্থানীয়রা বলছেন, প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবারও শ্রমিকরা কাজ করছিলেন, কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো ভবন দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে। অনেকেই বের হতে না পেরে প্রাণ হারান।
সরকারি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে শ্রম মন্ত্রণালয়।