জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ কক্সবাজার ভ্রমণ নিয়ে শোকজের জবাবে জানিয়েছেন, গোয়েন্দা সংস্থা ও মিডিয়ার মিথ্যাচার এবং দলের অতি উৎসাহী সিদ্ধান্তে তিনি ক্ষুব্ধ।
তিনি দাবি করেন, দলের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্তে জনগণের মতামতের প্রতিফলন ঘটেনি এবং নারী নেতৃত্বকে হেয় করতেই তাসনিম জারার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয়েছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ এক বিস্ফোরক বক্তব্যে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা, কিছু মিডিয়া এবং নিজ দলের সিদ্ধান্তকে কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছেন। দল থেকে পাঠানো শোকজের জবাবে তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানান, কক্সবাজার ভ্রমণকে ঘিরে তার বিরুদ্ধে যে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হয়েছে, তা গোয়েন্দা সংস্থা ও মিডিয়ার সম্মিলিত অপচেষ্টার ফসল। এই ইস্যুতে দলের পক্ষ থেকে শোকজ করা ছিল অতি উৎসাহী এবং অসময়োচিত পদক্ষেপ।
হাসনাত লিখিত জবাবে উল্লেখ করেন, কক্সবাজার যাত্রার প্রতিটি মুহূর্ত—বিমানবন্দর থেকে শুরু করে হোটেল পর্যন্ত—গোয়েন্দা সংস্থার ক্যামেরায় ধরা হয় এবং তা কিছু মিডিয়ার হাতে তুলে দেওয়া হয়। এরপর মিডিয়া সেই ফুটেজে "ক্রাইম থ্রিলার" ঘরানার সাউন্ড দিয়ে কল্পিত ষড়যন্ত্রের গল্প তৈরি করে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ায়। তিনি অভিযোগ করেন, এসব প্রচারে তাদের এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যেন তারা ‘গণতন্ত্রবিরোধী চক্রান্তে’ যুক্ত ছিলেন, অথচ তারা কেবল ব্যক্তিগত সফরে ছিলেন। এমনকি আমেরিকার রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে তাদের গোপন বৈঠক রয়েছে বলেও গুজব ছড়ানো হয়, অথচ তখন পিটার হাস বাংলাদেশেই ছিলেন না।
তিনি এ ঘটনাকে শুধু ব্যক্তি আক্রমণ হিসেবে নয়, বরং গোটা নারী নেতৃত্বকে নিরুৎসাহিত করার একটি ষড়যন্ত্র হিসেবেও চিহ্নিত করেন। তাঁর ভাষায়, “তাসনিম জারাকে ঘিরে যেভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও কুরুচিপূর্ণ স্লাটশেমিং চালানো হয়েছে, তা রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণকে ভয় ধরানোর একটি সুপরিকল্পিত চেষ্টা।” তিনি বলেন, শুধু নারী হওয়ার কারণেই তাসনিম জারার বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় ও কিছু মূলধারার মিডিয়ায় এমন কুৎসিত প্রচারণা চালানো হয়েছে, যা একটি গণতান্ত্রিক সমাজে মেনে নেওয়া যায় না।
হাসনাত মনে করেন, জুলাই মাসে গণ-অভ্যুত্থানে নারীদের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই সেই আন্দোলনের পরে নারী নেত্রীদের হেয়প্রতিপন্ন করার এই অপচেষ্টা আরও বেশি দুর্ভাগ্যজনক। অথচ এসব বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে কোনো দৃঢ় প্রতিবাদ না জানিয়ে, উল্টো তাদের বিরুদ্ধে শোকজ পাঠানো হয়েছে—এটি দলীয় বিচক্ষণতার অভাব বলেই তিনি মনে করেন।
তিনি আরও বলেন, যে কোনো রাজনৈতিক দলে শোকজ করতে হলে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কোনো নির্দিষ্ট ধারা লঙ্ঘনের উল্লেখ থাকতে হয়। কিন্তু তাঁকে দেয়া শোকজে এমন কোনো স্পষ্ট অভিযোগ নেই। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “শুধু মিডিয়া ও গোয়েন্দা সংস্থার মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণার ভিত্তিতে যদি কাউকে শোকজ করা হয়, তাহলে সেটি কতটা গণতান্ত্রিক দলীয় সংস্কৃতির প্রতিফলন?”
হাসনাত লিখেছেন, “আমি দলের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, গণতান্ত্রিক দলের শক্তি আসে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও উন্মুক্ত আলোচনা থেকে, ভয়ভীতি ও ষড়যন্ত্রে নয়। মিডিয়া এবং গোয়েন্দা সংস্থা যখন একই স্ক্রিপ্টে কাজ করে, তখন দলের দায়িত্ব আরও সতর্ক হওয়া। আমাদের উচিত ছিল ভুয়া প্রচার চালানো সংস্থা ও মিডিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া, নিজের লোকদের বিরুদ্ধে নয়।”
শোকজের জবাবের মাধ্যমে হাসনাত একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলে ধরেছেন—গণতন্ত্রের স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলো কতটা স্বচ্ছ ও দায়বদ্ধ আচরণ করছে? তার বক্তব্যে প্রতিফলিত হয়েছে বর্তমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির দুর্বলতা, মিডিয়ার পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকা এবং গোয়েন্দা সংস্থার স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে এক সাহসী প্রতিবাদ।