সীমান্তে রক্তাক্ত অভিযান: মণিপুরে ভারতীয় সেনার গুলিতে নিহত ১০ ‘উগ্রপন্থী’
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুর আবারও রক্তাক্ত। ভারত-মিয়ানমার সীমান্তবর্তী চান্দেল জেলায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর গুলিতে অন্তত ১০ জন নিহত হওয়ার দাবি করেছে সেনাবাহিনীর পূর্ব কমান্ড। সেনা সূত্র বলছে, নিহতরা ‘সশস্ত্র উগ্রপন্থী’ এবং তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ। বুধবার এই অভিযান চালানো হয় বলে নিশ্চিত করেছে সেনাবাহিনী।
কী ঘটেছিল সেই রাতে?
পূর্ব কমান্ড জানায়, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, কিছু সশস্ত্র উগ্রপন্থী মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে মণিপুরে প্রবেশ করে ভারতে ঢোকার চেষ্টা করছে। এ তথ্য পেয়েই আসাম রাইফেলসের একটি দল অভিযান শুরু করে চান্দেল জেলায়। অভিযানের সময়ই সেনাদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। পাল্টা গুলি চালায় সেনারাও। ফলস্বরূপ ১০ জন সন্দেহভাজন উগ্রপন্থী নিহত হয়।
অভিযান এখনো চলমান রয়েছে বলে জানানো হয়েছে এবং উদ্ধার করা অস্ত্রশস্ত্রের পরিমাণও উল্লেখযোগ্য। তবে নিহতদের পরিচয় বা তাদের কোনো সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেনি সেনাবাহিনী।
নিহতদের পরিবার ও আইনগত অবস্থান এখনও অজানা
এদিকে নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে বা তাদের পক্ষে কোনো আইনজীবীর বক্তব্য এখনো পর্যন্ত গণমাধ্যমে আসেনি। এই ঘটনায় মানবাধিকার সংস্থাগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অশান্ত মণিপুর: দীর্ঘদিনের সংঘাত ও সহিংসতা
২০২৩ সালের মে মাসে মণিপুরে শুরু হয় ভয়াবহ জাতিগত সংঘর্ষ। রাজ্যের দুই প্রধান সম্প্রদায়—মেইতেই এবং কুকি—এর মধ্যে সংঘর্ষে প্রাণ হারায় অন্তত ২৬০ জন। সহিংসতার মাত্রা এতটাই বেড়ে যায় যে রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করতে বাধ্য হয় কেন্দ্রীয় সরকার। আজও সেই অস্থিরতা পুরোপুরি কাটেনি। এখনো রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় সেনা মোতায়েন রয়েছে এবং নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে।
নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযোগ—এই অস্থির পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার থেকে উগ্রপন্থীরা ভারতে ঢোকার চেষ্টা করছে এবং নতুন করে সহিংসতা ছড়ানোর পরিকল্পনা করছে।
সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে
ভারত-মিয়ানমার সীমান্ত বরাবর বহু এলাকা রয়েছে যেগুলো বনভূমি এবং পাহাড়ঘেরা, যেখানে নজরদারি কঠিন। এই ধরনের এলাকা ব্যবহার করেই উগ্রপন্থীরা দীর্ঘদিন ধরে গোপন চলাফেরা চালিয়ে আসছে বলে জানায় নিরাপত্তা সংস্থাগুলো। ভারতীয় সেনাবাহিনী বলছে, সীমান্তে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শেষ কথা
এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করে দিল, মণিপুর এখনো বারুদের স্তুপের উপর বসে আছে। প্রতিনিয়ত নতুন সংঘর্ষ, বন্দুকযুদ্ধ, প্রাণহানি—সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। আর এই অস্থিরতার মধ্যে সীমান্ত পার হয়ে আসা উগ্রপন্থীদের হামলা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। এখন প্রশ্ন হলো—এই উত্তপ্ত পরিস্থিতি কীভাবে ঠান্ডা হবে? সরকার ও সেনাবাহিনীর পরবর্তী পদক্ষেপই বলে দেবে মণিপুরের ভবিষ্যৎ কোন পথে যাবে।