close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

মেঘনা ধনাগোদা নদী ভাঙন রোধে মতবিনিময় সভা।

ShahidulIslamkhokan avatar   
ShahidulIslamkhokan
****

মতলব উত্তরে ধনাগোদা নদীভাঙন প্রতিরোধে নদীতীর রক্ষা প্রকল্পের জন্য মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

শহিদুল ইসলাম খোকন:
ধনাগোদা নদীর তীব্র ভাঙন থেকে চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ জনপদ রক্ষায় নদীতীর প্রতিরক্ষা প্রকল্প প্রণয়নের লক্ষ্যে আজ মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল ২০২৫) মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের যৌথ আয়োজনে সকাল ১১টায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের সভাকক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় জানানো হয়, ‘নদীর তীর প্রতিরক্ষা কাজ’ শীর্ষক প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় বাগানবাড়ী ইউনিয়নের হাপানিয়া, খাগুরিয়া ও নবীপুর এলাকার নদীর বাম তীরে কিঃমিঃ ৫০০ মিটার হতে দেড় কিঃমিঃ পর্যন্ত মোট ২কিঃমিঃ এবং ষাটনল ও সাদুল্যাপুর ইউনিয়নের কালিপুর বাজার সংলগ্ন কিঃমিঃ ৭.২ হতে ৭.৯ পর্যন্ত মোট ৭০০ মিটার এলাকায় তীর সংরক্ষণ কাজ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাহমুদা কুলসুম মনি। তিনি বলেন, স্থানীয় জনগণের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এই ভাঙনপ্রবণ এলাকাগুলোতে টেকসই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে কয়েক হাজার মানুষের ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি রক্ষা পাবে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সেলিম শাহেদ। তিনি প্রকল্পের কারিগরি দিক ও সম্ভাব্য বাস্তবায়ন কৌশল তুলে ধরে বলেন, আমরা মাটি পরীক্ষা, নদীর প্রবাহ বিশ্লেষণ ও স্থানীয় চাহিদা বিবেচনায় প্রকল্প নকশা তৈরি করছি। দ্রুত প্রকল্প অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হবে বলেন প্রকৌশলী সেলিম শাহেদ।
সভায় অংশ নেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফয়সাল মোহাম্মদ আলী, যিনি বলেন, ভাঙনের ফলে কৃষিজমি হারিয়ে যাচ্ছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে কৃষি উৎপাদনও নিরাপদ হবে।
উপজেলা প্রকৌশলী সোহেল আনোয়ার তাঁর বক্তব্যে বলেন, নদীভাঙন ঠেকাতে শুধু নদীতীর সংরক্ষণই নয়, পাশাপাশি স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ ও সংস্কারও জরুরি। রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্টসহ স্থানীয় অবকাঠামো ভাঙনের ফলে ঝুঁকিতে রয়েছে। তাই প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় এসব বিষয়কেও বিবেচনায় নিতে হবে।
মেঘনা-ধনাগোদা পানি ব্যবহারকারী ফেডারেশনের সভাপতি রাসেল ফয়েজ আহম্মেদ চৌধুরী শাহীন সভায় বলেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে শুধু নদীভাঙন ঠেকানো নয়, বরং সেচ ব্যবস্থাপনার স্থায়িত্ব ও পানির সুষম বণ্টনও নিশ্চিত হবে। পানি ব্যবহারকারীদের মতামত ও অংশগ্রহণ প্রকল্প সফলতার চাবিকাঠি, তাই বাস্তবায়নের প্রতিটি ধাপে স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে হবে।
উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও খাগুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা মিয়া মনজুর আমিন স্বপন বলেন, আমরা বছরের পর বছর ধরে ভাঙনের আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি। সরকার যদি প্রকল্পটি দ্রুত অনুমোদন দেয়, তাহলে আমাদের এলাকার মানুষ বাঁচবে।
অষ্টগ্রাম পানি ব্যবস্থাপনা দলের সভাপতি শামসুজ্জামান বাবুল বলেন, আমাদের এলাকায় বিগত কয়েক বছর ধরে নদীভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। কৃষিজমি, বসতবাড়ি এবং রাস্তাঘাট সবকিছু ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। পানি ব্যবস্থাপনা দল হিসেবে আমরা মনে করি, এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে শুধু ভাঙন রোধই নয়, বরং স্থানীয় অর্থনীতি ও পরিবেশও রক্ষা পাবে। আমরা চাই, বাস্তবায়নে স্থানীয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত হোক।
মতলব উত্তরের কর্মরত সাংবাদিকরা জানান নদীভাঙনের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট ও জনজীবনে ক্ষতির চিত্র তুলে ধরেন এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার দাবি জানান।
সভায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ছাড়াও মতলব উত্তরের কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ ভুক্তভোগী এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।
সভায় সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত হয়, প্রকল্পের জরুরি বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড একসঙ্গে কাজ করবে এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে দ্রুত প্রস্তাব পাঠানো হবে।

ছবি ক্যাপশন:
মতলব উত্তরে ধনাগোদা নদীভাঙন প্রতিরোধে নদীতীর রক্ষা প্রকল্পের জন্য মতবিনিময় সভা প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ইউএনও মাহমুদা কুলসুম মনি।

কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি


News Card Generator