মধ্য প্রা চ্যে মা র্কি ন সেনাদের দুঃস্বপ্নের রাত, ই রা নে র সাহসে হতভম্ব গোটা বিশ্ব!..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
মধ্যরাতে ইরানের পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কেঁপে উঠল যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটি। সাহসী জবাবে হতবাক বিশ্ব, প্রশ্ন উঠছে— মধ্যপ্রাচ্যে কি যুক্তরাষ্ট্রের একচ্ছত্র আধিপত্যের অবসান ঘটছে?..

মধ্যপ্রাচ্যের রক্তগরম আকাশ যেন হঠাৎ করেই জ্বলে উঠল। ২০২৫ সালের ২৩ জুনের রাতটি মার্কিন সেনাদের জন্য হয়ে দাঁড়ায় এক দুঃস্বপ্নের অধ্যায়! ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের গোপন হামলার জবাবে এমন এক পাল্টা প্রত্যাঘাত করে ইরান, যা বিশ্ববাসীকে হতবাক করেছে। কোনো পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে।

বিশেষ করে কাতারে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বিদেশি সামরিক ঘাঁটি ‘আল উদেইদ’-এ ইরান ছুড়ে মারে ১৯টি শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র। এই ঘাঁটিতেই অবস্থান করছে প্রায় ১০ হাজার মার্কিন সেনা, অগণিত যুদ্ধবিমান ও ড্রোন— যা পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে মার্কিন সামরিক প্রভাব বজায় রাখার মূলে। এত বড় আঘাত যে শুধু বিস্ময় নয়, বরং একটি যুগান্তকারী বার্তা— ইরান ভয় পায় না, প্রতিশোধ নিতে জানে।

যুক্তরাষ্ট্র এবং কাতার উভয়েই দাবি করে, বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ধ্বংস করা সম্ভব হয়েছে এবং বড় ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে প্রতিরক্ষা সফল না ব্যর্থ, তা নিয়েও চলছে বিতর্ক। কেননা আঘাতের সময় ও কৌশল দেখিয়ে দেয়— এটা ছিল নিছক প্রতিশোধ নয়, বরং সুপরিকল্পিত কৌশলগত পদক্ষেপ। মূল বার্তাটা ছিল পরিষ্কার: যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের জবাবে ইরান আর নীরব থাকবে না।

ইরান শুধু কাতার নয়, একই রাতের ভোরে ইরাকের দুটি মার্কিন ঘাঁটি— ইমাম আলী ও বালাদ— তে চালায় হামলা। যদিও এই হামলার দায় কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেনি, হামলার ধরন ছিল অত্যন্ত সংগঠিত এবং সমন্বিত। অনেকেই বলছেন, এটা ছিল একটি একক পরিকল্পনার অংশ, যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে— একতরফা খেলা আর চলবে না।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই প্রতিশোধ শুধু সেনা শক্তির নয়, বরং কূটনৈতিক পরিপক্বতারও প্রতিফলন। কেননা ইরান হামলার আগেই কাতার সরকারকে অবহিত করেছিল, যেন তারা বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি এড়াতে পারে। এটি প্রমাণ করে, ইরান কেবল প্রতিশোধ নিতে চায় না, বরং আন্তর্জাতিক নীতিমালাকেও গুরুত্ব দেয়।

এই ঘটনার পরপরই বিশ্ব গণমাধ্যমে নেমে আসে প্রতিক্রিয়ার ঝড়। পশ্চিমা মিডিয়া ঘটনাটিকে তুলে ধরেছে ‘বেপরোয়া সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ হিসেবে। অন্যদিকে সাধারণ মানুষ এবং অনেক নিরপেক্ষ বিশ্লেষক এটিকে দেখছেন ‘ন্যায়সঙ্গত আত্মরক্ষা’র প্রতীক হিসেবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে ইরানের সাহস ও সুপরিকল্পিত কৌশলের প্রশংসা।

এক ব্যবহারকারী লিখেছেন— “যারা মনে করেছিল ইরান নতজানু থাকবে, তারা ভুল প্রমাণিত হয়েছে।” আরেকজন লিখেছেন— “এই হামলা নয়, এটা ছিল একটি ঘোষণা— ইরান দুর্বল নয়।”

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি জানিয়েছেন, “আমরা যুদ্ধ চাই না। আমরা ধ্বংস চাই না। তবে কেউ আমাদের ভূখণ্ডে হামলা করলে, আমরা চুপ করে থাকব না। মর্যাদার প্রশ্নে আমরা আপস করব না।” এই বক্তব্যে একধরনের দৃঢ়তা স্পষ্ট— ইরান শান্তিপ্রিয় হলেও নিজের আত্মমর্যাদা রক্ষা করতে জানে।

এই হামলার পর আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে— মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে কি এক নতুন অধ্যায় শুরু হলো? যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি পদক্ষেপের জন্য জবাব থাকবে, আর প্রতিরোধই হয়ে উঠবে নতুন কূটনৈতিক ভাষা?

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই হামলা কেবল একটি সামরিক ঘটনা নয়, এটি একটি মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনের সূচনা। দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র যেসব ঘাঁটিকে ‘সুরক্ষিত’ বলে দাবি করে আসছিল, সেগুলোর নিরাপত্তা যে আসলে কতটা ভঙ্গুর, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে ইরান।

২৩ জুনের রাতটি ছিল প্রতিশোধের রাত। কিন্তু একইসঙ্গে, এটি ছিল সাহস, কৌশল ও আত্মমর্যাদার এক জ্বলন্ত প্রমাণ। যুক্তরাষ্ট্র হয়তো প্রযুক্তিতে শক্তিশালী, কিন্তু ইরান দেখিয়ে দিয়েছে— সাহসে, সংকল্পে ও সময়জ্ঞানেও তারা পিছিয়ে নেই।

এই রাতে ইরান শুধু ঘাঁটিতে হামলা করেনি, আঘাত হেনেছে যুক্তরাষ্ট্রের অহংকারে। আর সেই আঘাত এত সহজে মুছে যাবে না— ইতিহাস হয়তো এই রাতকে মনে রাখবে ‘প্রতিরোধের নতুন যুগের সূচনা’ হিসেবে।

コメントがありません