উত্তপ্ত মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার নতুন সুর – আলোচনার পথে হাঁটছে ইরান, তবে হুঁশিয়ারির সুর তীব্র
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে ইরান। কিন্তু যুদ্ধ নয়—বরং পরোক্ষভাবে সমঝোতার রাস্তা খোলা রাখতে চাইছে তেহরান। এক্ষেত্রে বার্তাবাহক হতে পারে ওমান, যাকে দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মাঝে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দেখা হয়ে আসছে।
এই সিদ্ধান্তের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক ঘাঁটিগুলোর প্রতি এক কঠোর বার্তা পৌঁছে দিয়েছে ইরান। তেহরান স্পষ্ট বলেছে—যদি কোনো আরব দেশ তাদের ভূখণ্ড বা আকাশসীমা ইরানের বিরুদ্ধে হামলার কাজে ব্যবহারের অনুমতি দেয়, তবে সেই দেশকেও ‘শত্রু’ হিসেবে বিবেচনা করা হবে এবং তার পরিণতি হবে ভয়াবহ।
রয়টার্স-এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৬ এপ্রিল ইরানের এক শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তা জানান, দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি এরইমধ্যে সশস্ত্র বাহিনীকে ‘পূর্ণ সতর্কতায়’ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি জানান, এই পরোক্ষ আলোচনার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সদিচ্ছা যাচাই করা হবে। তবে আলোচনার পথ সহজ হবে না বলেও সতর্ক করেন তিনি।
মার্কিন ঘাঁটিগুলোর জন্য তীব্র সতর্কতা
মধ্যপ্রাচ্যের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলো—ইরাক, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও তুরস্কে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিগুলোর প্রতি ইরান কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে। তেহরানের ভাষায়, “এই ঘাঁটি থেকে কোনো হামলা চালানো হলে তা সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণার সমান হবে।”
ইতোমধ্যেই গাজা, লেবানন, ইয়েমেন ও সিরিয়ায় চলমান সংঘাত পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করে তুলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই উত্তেজনা বিশ্ব জ্বালানি বাজার ও অর্থনীতিতেও বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
আলোচনা চাই, তবে শর্ত সুনির্দিষ্ট
আলোচনা প্রসঙ্গে ইরান জানিয়েছে, যদি যুক্তরাষ্ট্র বাস্তব উদ্বেগ নিরসনের জন্য এগিয়ে আসে, তবে আলোচনায় বসা সম্ভব। তবে হুমকির মুখে নয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে, ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি কোনো আলোচনার অংশ হতে পারবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছে তেহরান।
তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিষয়টিকে কৌশলে সামলানোর চেষ্টা করছেন। তিনি ইতিমধ্যে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার উদ্দেশ্যে একটি প্রস্তাবনামূলক চিঠি পাঠিয়েছেন, যেখানে বলা হয়েছে, তিনি সংঘাত চান না, বরং একটি নতুন চুক্তি করতে চান।
পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে উদ্বেগ ও জটিলতা
জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা জানিয়েছে, ইরান ইতিমধ্যে ৬০% ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে, যা অস্ত্র ব্যবহারের উপযুক্ত ৯০% মাত্রার খুব কাছাকাছি। পশ্চিমা বিশ্বের আশঙ্কা—এটি সামরিক উদ্দেশ্যেই করা হচ্ছে। যদিও ইরান বরাবরই দাবি করে এসেছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে শান্তিপূর্ণ।
অতীতের দুঃসহ স্মৃতি ফিরছে?
২০১৯ সালের কথা মনে করিয়ে দেয় এই পরিস্থিতি। মার্কিন ড্রোন হামলায় কাসেম সোলেইমানি নিহত হওয়ার পর ইরান সরাসরি ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে পাল্টা হামলা চালিয়েছিল। এবারও পরিস্থিতি সেই পথেই যাচ্ছে কিনা, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ বিরাজ করছে।
রাশিয়ার ভূমিকা—বন্ধু না কৌশলী?
রাশিয়া, ইরানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মিত্র, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হুমকিকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে মন্তব্য করেছে। তবে ইরান বলছে—রাশিয়ার অবস্থান পুরোপুরি পরিষ্কার নয় এবং অনেক কিছুই নির্ভর করছে ট্রাম্প-পুতিন সম্পর্কের গতিপ্রবাহের ওপর।
আলোচনার টেবিল না কি যুদ্ধের ময়দান?
মধ্যপ্রাচ্য আজ এক চরম উত্তেজনার নাম। বড় কোনো সংঘাত যে কোনো সময় উসকে উঠতে পারে। তবে আলোচনার একটি ক্ষীণ আলো জ্বলছে—যা রক্ষা করতে হবে দুই পক্ষকেই। না হলে এর প্রভাব শুধু এই অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, ছড়িয়ে পড়বে পুরো বিশ্বজুড়ে।