মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কাতারে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলার আগে ইরানের পক্ষ থেকে আগাম সতর্ক বার্তা পাওয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তবে ইরান কেন এই সতর্কতা দিয়েছিল, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। এই ঘটনা ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্কের নৈরাশ্যপূর্ণ অবস্থার নতুন দিক উন্মোচন করেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, ইরানের এই সতর্কতা ছিল মূলত “প্রতীকী” এবং সংঘাত এড়ানোর জন্য দেয়া একটি সংকেত। নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক স্টেফান ফ্রুহলিং বিবিসিকে জানান, ইরান স্পষ্টভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝাতে চেয়েছে যে তারা বড় ধরনের যুদ্ধে যেতে চায় না। এই সতর্কতার ফলে কাতার ও যুক্তরাষ্ট্র বেসামরিক যাত্রীদের নিরাপদ সরে যাওয়ার ব্যবস্থা নিতে পেরেছে।
কিন্তু এই ঘটনাটি কেবল সতর্কতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে, যা ট্রাম্পের বক্তব্যের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। মার্কিন সরকারের অভ্যন্তরেও এই সমঝোতার প্রতি যথেষ্ট সন্দেহ তৈরি হয়েছে। সাবেক মার্কিন কূটনৈতিক কর্মকর্তা নেড প্রাইস এ সমঝোতাকে “অস্থায়ী” ও “নিশ্চিত নয়” বলে উল্লেখ করেছেন।
বর্তমানে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে যে ধরণের কূটনৈতিক যোগাযোগ হচ্ছে, তা কতটা কার্যকর হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। সামরিক ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রে দুই পক্ষের রণনীতি ও ভবিষ্যৎ সম্পর্ক বিশ্বের জন্য বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে বলে বিশ্লেষকদের মত।
গত কিছু দিনে কাতার ও ইরাকের মার্কিন ঘাঁটিতে আঘাত হানার ঘটনায় উত্তেজনা তীব্র হয়েছে। এই হামলাগুলোর পেছনে ইরানের কোনো জড়িত থাকার অভিযোগ উঠলেও, ইরানের তরফ থেকে হামলার আগেই সতর্কতা প্রদান করা হয়। এর ফলে অনেক বেসামরিক বিমান নিরাপদে সরিয়ে নেয়া সম্ভব হয়েছে।
এই হামলা ও সতর্কতার ঘটনায় ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার টানাপোড়েন আরও জটিল আকার ধারণ করেছে। ট্রাম্প প্রশাসনের সমালোচনা ও সন্দেহের মাঝেও ইরান যে সংঘাত এড়াতে চায় তা স্পষ্ট। তবে কূটনৈতিক মঞ্চে এই সংকট কতদিন স্থায়ী শান্তিতে পরিণত হবে তা এখনও প্রশ্নবিদ্ধ।
স্টেফান ফ্রুহলিংয়ের মতে, ইরান চায় এই উত্তেজনাকে সীমাবদ্ধ রাখতে এবং বড় কোনো সামরিক সংঘাতে না জড়িয়ে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে। একই সঙ্গে, যুক্তরাষ্ট্রও এই পরিস্থিতি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে, কারণ সামরিক সংঘর্ষ হলে তা মերձিন থেকে বিশ্বব্যাপী প্রভাব ফেলবে।
সাবেক কূটনৈতিক নেড প্রাইস বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতি কোনো চূড়ান্ত সমাধান নয়। এটি শুধু একটি সাময়িক সমঝোতা, যা দ্রুত ভেঙে যেতে পারে।” তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছেন যাতে তারা কূটনৈতিক পথ অনুসরণ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখে।
বিশ্বের বৃহত্তম ক্ষমতাগুলোর মধ্যে এই দ্বন্দ্ব কবে শান্তিতে পরিণত হবে তা নিশ্চিত নয়। তবে সতর্কতা ও কূটনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যমে বড় ধরনের সংঘাত এড়ানো সম্ভব হচ্ছে, যা সাময়িক হলেও শান্তির বার্তা দিচ্ছে। তবুও বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই সংকট এখনো পুরোপুরি টুটে যায়নি এবং তা যে কোনো সময় আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে।