মায়ের স্ট্রোক, কেন্দ্রে পৌঁছাতে দেরি; পরীক্ষা দেওয়া হলো না বাবাহারা আয়েশার..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
বাবাহারা আয়েশার মা হঠাৎ স্ট্রোক করে হাসপাতালে। তাকে রেখেই পরীক্ষাকেন্দ্রে ছুটে আসে আয়েশা, কিন্তু মাত্র দেড় ঘণ্টা দেরিতে আসায় কেন্দ্রে ঢুকতেই দেওয়া হয়নি! দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার মানবিক ব্যর্থতায় ফুঁসে..

মা স্ট্রোকে মৃত্যুপথযাত্রী, বাবার ছায়াও নেই—এই জীবনসংগ্রামের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আজও পড়ার টেবিল ছাড়েনি আয়েশা। কিন্তু জীবনের সবচেয়ে বড় পরীক্ষার দিন, সব প্রস্তুতি ছাপিয়ে হেরে গেল সে কেবল ৯০ মিনিটের দেরির কাছে। দেরি, যার পেছনে ছিল শুধুই এক অসহায় মায়ের জীবন-মৃত্যুর লড়াই।

আজ বৃহস্পতিবার সারাদেশে শুরু হয়েছে উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা। সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা যখন বই হাতে কেন্দ্রে ছুটছে, তখন ঢাকার মিরপুরে আয়েশা ছুটছে অন্য এক কেন্দ্রে—হাসপাতালে, যেখানে তার মা স্ট্রোক করে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। বাবা তো আগেই নেই। এমন দুর্দিনে মাকে হাসপাতালে রেখে পরীক্ষা কেন্দ্রে ছুটে আসতে আসতেই কেটে গেছে এক ঘণ্টা ত্রিশ মিনিট।

মিরপুরের সরকারি বাঙলা কলেজ কেন্দ্রে পৌঁছানোর পর জানা যায়, দেরিতে আসায় পরীক্ষায় বসার সুযোগ নেই। দায়িত্বপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সাফ জানিয়ে দেন—‘নিয়মের বাইরে গিয়ে কিছু করা সম্ভব নয়’। সেই মুহূর্তে চোখে পানি, মুখে হতাশা আর মনের ভেতর কান্নার পাহাড় নিয়ে আয়েশা দাঁড়িয়ে থাকে গেটের বাইরে।

তাকে কেন্দ্রে পৌঁছাতে সহায়তা করেছিলেন তার খালা। সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, “সকালে আয়েশার মা হঠাৎ স্ট্রোক করেন। আমরা সবাই হাসপাতালে ছুটে যাই। এমন অবস্থায় একা মেয়েটা কীভাবে চলে আসে? তারপরও সে সাহস করে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছাল, কিন্তু তাও তার ভাগ্যে জোটেনি প্রশ্নপত্র।

এই হৃদয়বিদারক ঘটনা মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামে হাজার হাজার মানুষ এ ঘটনার প্রতিবাদে মুখর হন। একটাই প্রশ্ন উঠে—মানবিকতা কি কেবল বইয়ের পাতায় থাকে?

এই ঘটনা শুধু সামাজিক প্রতিক্রিয়ায় থেমে থাকেনি। সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস (কাজল) ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে বলেন, “আজকের মিস হওয়া পরীক্ষা সে দিতে পারবে। প্রয়োজনে আমরা হাইকোর্টে যাবো, বিনা পারিশ্রমিকে আমি তার পাশে আছি।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, “আমার করা রিটের মাধ্যমে মতিঝিলের একটি কলেজের ১৩২ জন ছাত্রী পরীক্ষা শুরুর দুই দিন আগে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিল। তেমনি আয়েশাও আইনি সহায়তার মাধ্যমে তার পরীক্ষার অধিকার ফিরে পেতে পারে।

শিক্ষা বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর মানবিক গাফিলতির এ রূপ দেখে অনেকেই বলছেন—“শুধু নিয়মের খোলসে আটকে গেলে, জীবনের বাস্তবতাগুলো কোথায় দাঁড়াবে?

একজন শিক্ষার্থী, যার পরিবার ভেঙে পড়েছে, যার মা বাঁচার জন্য লড়ছেন—সেই শিক্ষার্থীকে সহানুভূতির বদলে ফিরিয়ে দেওয়া কি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রকৃত চিত্র নয়?

এই ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়—নিয়ম যদি মানুষের উপকারে না আসে, তবে তা শুধুই নিঃসঙ্গতা তৈরি করে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব শুধু নিয়ম মেনে চলা নয়, প্রয়োজন হলে সেখানে মানবতার সংশোধনী টানাও। আয়েশার জন্য আজ যে দ্বার বন্ধ হলো, কাল যেন অন্য কোনো মেয়ে—কোনো জীবন, কোনো স্বপ্ন—এরকম নিষ্ঠুরতার শিকার না হয়।

Inga kommentarer hittades