উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে পুড়ে যাওয়া ৫ মরদেহের পরিচয় মিলেছে অবশেষে। সিআইডির ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাব নমুনা পরীক্ষা করে তাদের শনাক্ত করেছে।
রাজধানীর উত্তরা এলাকায় অবস্থিত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাওয়া পাঁচটি মরদেহের পরিচয় অবশেষে মিলেছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) জানিয়েছে, ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে মরদেহগুলোর পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দুপুরে সিআইডির মিডিয়া বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান এক বিবৃতিতে জানান, এই দুর্ঘটনায় দগ্ধ পাঁচ ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা ডিএনএ প্রোফাইল তৈরি করে তা দাবিদারদের নমুনার সঙ্গে মেলাই এবং এর ভিত্তিতে নিশ্চিত হওয়া গেছে—পাঁচ মরদেহ কার কার, তা স্পষ্টভাবে চিহ্নিত হয়েছে।”
ডিএনএ পরীক্ষার এই জটিল ও সংবেদনশীল প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করা হয়েছে আধুনিক প্রযুক্তি ও আন্তর্জাতিক মানের ফরেনসিক সরঞ্জাম। এর আগে পাঁচটি মরদেহ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) রাখা হয়েছিল এবং সেখান থেকে সিআইডির ফরেনসিক টিম ১১টি নমুনা সংগ্রহ করে।
সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার শম্পা ইয়াসমিন জানান, মরদেহ বা দেহাবশেষ থেকে নেওয়া নমুনাগুলোর সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের দেওয়া রক্তের নমুনা মেলানো হয়। তিনি বলেন, “একই পরিবারের একাধিক সদস্যও নমুনা দিয়েছেন। এই ক্রস-ম্যাচিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত হয়েছি কে কোন মরদেহের সঙ্গে সম্পর্কিত।”
এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে নিখোঁজদের স্বজনদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছিল—যারা এখনো দাবিদার হিসেবে এগিয়ে আসেননি, তারা যেন দ্রুত মালিবাগে অবস্থিত সিআইডি ভবনে গিয়ে ডিএনএ নমুনা প্রদান করেন। গত বুধবার (২৩ জুলাই) তথ্য বিবরণীতে এই অনুরোধ জানানো হয়।
এই দুর্ঘটনা জাতীয়ভাবে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। ঘটনার দিন থেকেই উদ্ধারকাজ ও তদন্তে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, দমকল বাহিনী এবং সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষায়িত ইউনিট। কিন্তু পুড়ে যাওয়া মরদেহগুলোর অবস্থা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে প্রাথমিকভাবে সেগুলোর কোনো সুনির্দিষ্ট পরিচয় নিশ্চিত করা যায়নি।
অবশেষে আধুনিক ফরেনসিক প্রযুক্তির সহায়তায় সেই অন্ধকার কাটিয়ে স্বজনহারা পরিবারগুলো পেল কিছুটা স্বস্তি। এখন মরদেহগুলো যথাযথভাবে হস্তান্তরের প্রস্তুতি নিচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই দুর্ঘটনা যেমন আমাদের বিমানের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে, তেমনি মৃতদের সঠিক পরিচয় নিশ্চিত করতে ডিএনএ প্রযুক্তির গুরুত্ব আবারও প্রমাণিত হলো।