মাহফুজের মাথায় ভয়াবহ আঘাত: ৭২ ঘণ্টা সংকটপূর্ণ, হাসপাতালে ভর্তি থাকার পরামর্শ পিনাকীর
সাংবাদিক মাহফুজ আলমের উপর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হামলার পর তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জনপ্রিয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ব্লগার পিনাকী ভট্টাচার্য। বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সন্ধ্যায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে তিনি মাহফুজের আঘাতের বিষয়ে বিস্তারিত মন্তব্য করেন।
পিনাকী ভট্টাচার্য বলেন, “মাহফুজের মাথার আঘাত মারাত্মক হতে পারে। মানুষের খুলি সাধারণত শক্ত হয়, তবে আঘাত লেগেছে খুবই সেনসিটিভ ও দুর্বল জায়গায়। ওই জায়গায় এমনভাবে সজোরে আঘাত লেগেছে যে, এটি প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। যেকোনো অভিজ্ঞ ডাক্তার এই ধরনের আঘাত দেখেই বলবেন, এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।”
তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের আঘাতে তাৎক্ষণিক ইনট্রা-ক্রেনিয়াল হেমোরেজ বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ শুরু হতে পারে। শুধু তা-ই নয়, প্রথম ৭২ ঘণ্টা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হলেও এমনকি দুই থেকে তিন সপ্তাহ পরেও এই রক্তপাতের আশঙ্কা থেকেই যায়। এজন্য আমি মাহফুজকে অন্তত তিন সপ্তাহ হাসপাতালে ভর্তি থাকার পরামর্শ দিচ্ছি।”
তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, “নিউরোলজি ইন্সটিটিউট হলো এ ধরনের রোগীর জন্য সবচেয়ে ভালো জায়গা। মাহফুজকে ওখানেই ভর্তি করানো উচিত। যারা এই হামলা চালিয়েছে তারা চরম নিন্দার যোগ্য। এই ধরনের হিংসাত্মক আচরণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে এলে তা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য বিপজ্জনক বার্তা বহন করে।”
কী ঘটেছিল মাহফুজের সঙ্গে?
বুধবার (১৪ মে) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে চলমান শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন মাহফুজ আলম। হঠাৎ করে কিছু আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী তাঁর উপর ক্ষিপ্ত হয়ে বোতল নিক্ষেপ করেন। এ সময় মাহফুজের মাথায় সজোরে একটি বোতল লাগে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তিনি সঙ্গে সঙ্গেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এবং রক্তপাত হয়।
ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। সাংবাদিক মহলে এ ঘটনাকে ‘মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন’ হিসেবে দেখা হচ্ছে। অনেকে বলছেন, এটি শুধু একজন সাংবাদিকের উপর হামলা নয়, এটি মুক্ত সাংবাদিকতার উপর সরাসরি আঘাত।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও নিন্দা
ঘটনার পর থেকে সাংবাদিক সমাজ, সুশীল মহল এবং সাধারণ মানুষ বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে এবং নিন্দার ঝড় উঠেছে।
পিনাকী ভট্টাচার্যের পোস্টটিও ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। তিনি বলেন, “আমি বারবার বলছি, যারা এই কাজটি করেছে তারা শুধু অন্যায় করেনি, তারা চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতা দেখিয়েছে। এরা শিক্ষার্থী নামধারী অশিক্ষিত। শিক্ষার আলো ছুঁয়েইনি এখনো।”
তিনি আরও লিখেছেন, “আমি আবারও নিন্দা জানাই। আমরা এর বিচার চাই। এটা সহ্য করার মতো ঘটনা নয়। এ ধরনের সহিংস আচরণ বরদাশত করা যায় না।”
সাংবাদিকদের উদ্বেগ
এই ঘটনার পর গণমাধ্যমকর্মীরা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে এবং বাইরে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই বলছেন, মাঠে কাজ করতে গিয়ে সাংবাদিকরা ক্রমেই আক্রমণের শিকার হচ্ছেন, যা গণতন্ত্র ও মুক্ত গণমাধ্যমের জন্য ভয়ানক হুমকি।
শেষ কথা
মাহফুজ আলম বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং তাঁর শারীরিক অবস্থা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তবে পিনাকী ভট্টাচার্যের মন্তব্য ও পরামর্শ অনুযায়ী, পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা তাঁর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংবাদিক মহলে এই ঘটনা নিয়ে আলোচনার ঝড় বইছে। অনেকেই বলছেন, যারা এই আঘাত করেছে, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত এবং কঠোর ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আরও বাড়বে।