রাত তখন গভীর। শহরের ব্যস্ততা থেমে গেছে, মানুষ ঘুমে বিভোর। এমন এক সময়েই মাদারীপুরের নির্জন রাস্তায় শুরু হয় এক অদ্ভুত ঘটনা—ব্যানার হাতে ঝটিকা মিছিল, মুখে মাস্ক, মাথায় হেলমেট।
এ দৃশ্য যেন বাস্তবের কোনো রাজনৈতিক ‘থ্রিলার’—তবে ঘটনা একেবারেই বাস্তব।
গত বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাত থেকে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে, যা দ্রুত আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। ভিডিওতে দেখা যায়, নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ-এর ব্যানারে মাদারীপুরের একদল যুবক নির্জন রাস্তায় মিছিল করছে। মুখে মাস্ক, মাথায় হেলমেট—কে কারা, চিনে ফেলা কঠিন।
ভিডিওটি মাত্র ৩৮ সেকেন্ডের, কিন্তু এর প্রভাব অনেক দীর্ঘস্থায়ী। কারণ ভিডিওটি পোস্ট করেছেন স্বয়ং ছাত্রলীগ মাদারীপুর জেলা শাখার সদস্য এবং পৌর শাখার সভাপতি নোবেল ব্যাপারী।
তিনি তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে ভিডিওটি প্রকাশ করেন, যেখানে দেখা যায় ব্যানারে বড় করে তিনটি ছবি—জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, এবং মাদারীপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান।
মিছিলকারীদের হাতে ব্যানার ছিল, মুখ ঢাকা, এবং কয়েকজনের মাথায় হেলমেটও দেখা যায়—এ যেন এক গোপন অভিযানের রূপ। সাধারণত ছাত্ররাজনীতির মিছিল হয় দিনের বেলায়, জনসমক্ষে, ঢোল-ডাক-স্লোগানে মুখর হয়ে। কিন্তু এই মিছিল তার ঠিক বিপরীত—নীরব, মুখোশধারী, নির্জন রাস্তায়।
ভিডিওটি ভাইরাল হতেই সাধারণ মানুষের মাঝে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন—ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ সংগঠন হওয়ার পরও তারা কীভাবে আবার প্রকাশ্যে এমন কার্যক্রম চালাতে পারে? আর যদি মিছিল করারই ছিল, তবে কেন মুখ ঢেকে? কীসের ভয়? কার সামনে নিজেদের চেনাতে চায়নি তারা?
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘটনাটি ইঙ্গিত দেয়—নিষিদ্ধ হলেও ছাত্রলীগ এখনো মাঠে সক্রিয়, এবং তারা কিছুটা গোপন পরিকল্পনায় আবার সক্রিয় হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ভিডিও বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে। কারা এই মিছিলে অংশ নিয়েছেন এবং এর উদ্দেশ্য কী ছিল—তা খুঁজে বের করার জন্য তদন্ত শুরু হয়েছে।
রাজনৈতিক মহলে জল্পনা চলছে—আবারও কি নিষিদ্ধ সংগঠনটি মাঠে নামার চেষ্টা করছে? এমনকি অনেকে মনে করছেন, এটি হয়তো কোনো ‘পাওয়ার শো’ বা রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। কেউ কেউ এটিকে স্থানীয় রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ হিসেবেও দেখছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা ভীত—কারণ এইভাবে রাতের আঁধারে মুখ ঢেকে মিছিল করাটা শহরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
ছাত্রলীগের এই মুখোশধারী রাতের মিছিল শুধু একটি ভিডিও নয়—এ যেন নতুন করে পুরোনো অস্থির সময়ের ছায়া ফেরার পূর্বাভাস।
আলোর নিচে অন্ধকারের খেলাটা শুরু হয়েছে কি?