উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত ঘটনায় নিহত ছাত্র সায়ানের মরদেহ গ্রামে পৌঁছাতেই ছড়িয়ে পড়ে শোকের ছায়া। কান্নায় ভেঙে পড়েছে পরিবার ও এলাকাবাসী।
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে দগ্ধ হওয়া সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সায়ান ইউসুফ (১৪) মৃত্যুর কাছে হার মানল। সোমবার দিবাগত রাতে, ২১ জুলাই, চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে সে।
পরদিন, মঙ্গলবার ২২ জুলাই দুপুরে সায়ানের মরদেহ পৌঁছায় লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের পালবাড়ির গ্রামের বাড়িতে। বিকেল ৩টায় জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। তার মৃত্যুতে পুরো এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। বাড়িতে কান্নায় ভেঙে পড়েন দাদি কামরুন নাহার, মা শামীমা শাম্মী ও অন্যান্য স্বজনরা। এলাকাবাসী, আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা ভিড় করেন শেষবারের মতো সায়ানকে দেখতে। প্রতিটি মুখেই বিষাদের ছাপ, প্রতিটি চোখেই অশ্রু।
সায়ানের বাবা এএফএম ইউসুফ মাইলস্টোন কলেজের রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং মা শামীমা শাম্মী মাইলস্টোন স্কুল শাখার রসায়নের শিক্ষক। তাঁরা ঢাকার উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরে বসবাস করতেন। একমাত্র সন্তান সায়ান ছিল তাদের জীবনের স্বপ্ন ও গর্বের প্রতীক। তার অকাল মৃত্যু যেন পরিবারটির সব আলো নিভিয়ে দিয়েছে।
বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা ঘটে সোমবার দুপুরে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ভবনের ওপর আছড়ে পড়ে। ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও আগুনে দগ্ধ হয় একাধিক শিক্ষার্থী, যার মধ্যে সায়ান অন্যতম। দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে ভর্তি করা হয় বার্ন ইউনিটে। চিকিৎসকরা চেষ্টা করেও তাকে বাঁচাতে পারেননি। রাত সাড়ে ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
এই দুর্ঘটনায় আরও প্রাণ হারিয়েছে আরেক শিক্ষার্থী আফনান ফায়াজ। সে একই শ্রেণির ছাত্র এবং লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার পার্বতীনগর ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের রহিমবক্স হাজী বাড়ির বাসিন্দা। আফনানকে মঙ্গলবার সকালেই ঢাকায় দাফন করা হয়। তার পরিবারেও নেমে এসেছে দুঃসহ এক শোকের পাহাড়।
এ দুর্ঘটনার পর থেকে সারাদেশে নানান প্রশ্ন উঠেছে—একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর কীভাবে একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান আছড়ে পড়ে? শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা কোথায়? এই ঘটনায় দায়ীদের চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে নানা মহলে।
সায়ান ও আফনানের মৃত্যু শুধু দুইটি পরিবারের নয়, পুরো দেশের হৃদয়ে নাড়া দিয়েছে। দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি, দায়িত্বশীলতার অভাব এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় দুর্বল প্রস্তুতি নিয়েও জনমনে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
এই দুই কিশোরের মৃত্যু যেন আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবন কতটা অনিশ্চিত, আর দায়িত্বহীনতার ফলাফল কতটা ভয়াবহ হতে পারে।