close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

লাখের বেশি হিন্দু ভোটারের মন জয়ে তৎপর বিএনপি-জামায়াত

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
With over 100,000 Hindu voters in focus, BNP and Jamaat are campaigning aggressively in Panchagarh-2 through grassroots outreach and strategic voter engagement.

এক লাখের বেশি হিন্দু ভোটারের সমর্থন পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিএনপি ও জামায়াত। বোদা-দেবীগঞ্জে চলছে উঠোন বৈঠক, সহানুভূতির রাজনীতি আর ভোট টানার প্রতিযোগিতা।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে দেশের সীমান্তবর্তী জেলা পঞ্চগড়ের রাজনীতি। জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং কৌশলগত গুরুত্বসম্পন্ন আসন পঞ্চগড়-২, যেখানে বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলা অন্তর্ভুক্ত, সেই আসন ঘিরে শুরু হয়েছে বড় ধরনের নির্বাচনী তৎপরতা। এই আসনে এবার এক লাখের বেশি হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভোটার রয়েছেন, যাদের মন জয় করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা।

২০০৮ সাল থেকে আওয়ামী লীগের দখলে থাকা এই আসনে দীর্ঘদিন ধরে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নূরুল ইসলাম সুজন। কিন্তু সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে এই আসনে সরকার দলীয় তৎপরতা অনেকটাই স্তিমিত। সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিএনপি এবং জামায়াত নিজ নিজ অবস্থান দৃঢ় করতে শুরু করেছে। বিশেষ করে হিন্দু ভোটার অধ্যুষিত এলাকাগুলোর প্রতি দুই দলের আলাদা মনোযোগ রয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, পঞ্চগড়-২ আসনে বর্তমানে ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৩ হাজারের বেশি। এর মধ্যে এক লাখের বেশি হিন্দু ভোটার। বোদা উপজেলার পাঁচপীর ইউনিয়ন ও দেবীগঞ্জ উপজেলার সুন্দরদীঘি এলাকায় এই ভোটারদের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি। গত নির্বাচনের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, এই ভোটারদের সিদ্ধান্তই জয়-পরাজয়ের পার্থক্য গড়ে দিতে পারে।

বিএনপি এবং জামায়াত এখন প্রতিদিন উঠোন বৈঠক, দরিদ্রদের পাশে দাঁড়ানো, পূজার সময় সহযোগিতা, এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা প্রদানে ভূমিকা রাখার মাধ্যমে তাদের সমর্থন আদায়ে মরিয়া হয়ে উঠেছে। মাঠে প্রতিদিনই তাদের নেতা-কর্মীদের সক্রিয় দেখা যাচ্ছে।

পঞ্চগড়-২ আসনে বিগত নির্বাচনে বিএনপির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ফরহাদ হোসেন আজাদ। দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এবারও তার মনোনয়ন পাওয়া প্রায় নিশ্চিত বলে সূত্র জানিয়েছে। তিনি বর্তমানে কেন্দ্রীয় বিএনপির পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক এবং জেলা বিএনপির সদস্য সচিব।

আজাদ জানিয়েছেন, তার দল ৩১ দফা রাষ্ট্র মেরামতের রূপরেখা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে। তিনি বলেন, “আগে রাতের আঁধারে ভোট চুরি করা হয়েছিল। এবার জনগণের রায় সুষ্ঠু হলে পঞ্চগড়-২ আসনে বিএনপিই জয়ী হবে।” বিভিন্ন পূজা ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে তার উপস্থিতি এবং আর্থিক সহায়তা হিন্দু ভোটারদের মাঝে তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়েছে বলেও মনে করা হচ্ছে।

অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে এ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে সফিউল্লাহ সুফিকে, যিনি বোদা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও দলের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য। জামায়াত সরকার পতনের পর নতুন করে সংগঠনের পুনর্গঠনে মনোনিবেশ করেছে এবং নির্যাতনের গল্প তুলে ধরে সহানুভূতির রাজনীতি করছে।

২০২২ সালে করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির সময় প্রথম যে দল নিহতদের পাশে দাঁড়িয়েছিল, তা ছিল জামায়াত। নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা, সন্তানদের লেখাপড়ার দায়িত্ব এবং শারদীয় দুর্গাপূজায় মাদরাসা ছাত্রদের দিয়ে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করায় জামায়াত হিন্দু সম্প্রদায়ের নিকটও নিজেকে সহানুভূতিশীল দল হিসেবে তুলে ধরতে পেরেছে।

সফিউল্লাহ সুফি বলেন, “হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তায় আমরা অতন্দ্র প্রহরী হয়েছি। এখন তাদের সঙ্গে একাধিক ধর্মীয় ও পারিবারিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করি। তারাও আমাদের ইতিবাচকভাবে দেখছেন।

হিন্দু সম্প্রদায়ের দেশত্যাগের আশঙ্কার মধ্যেও বিএনপি একটি ‘সম্প্রীতি সমাবেশ’ আয়োজন করে বোদা শহীদ মিনার চত্বরে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য কল্যাণ ফ্রন্টের ব্যানারে আয়োজিত এই সভায় অংশ নেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। সভায় ফরহাদ হোসেন আজাদ বলেন, “এই দেশ সকলের। কোনো গুজবে কান না দিয়ে হিন্দু সম্প্রদায় যেন শান্তিপূর্ণভাবে নিজ এলাকায় থাকতে পারে, সে বিষয়ে আমরা নিশ্চয়তা দিচ্ছি।

জাতীয় নাগরিক পার্টি, জাকের পার্টি, জাসদ, গণসংহতি আন্দোলনসহ বিভিন্ন ছোট দল এ আসনে সীমিত তৎপরতা চালালেও ভোটের মূল প্রতিযোগিতা হবে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে—এমন ধারণাই স্থানীয় পর্যায়ে জোরালো।

পঞ্চগড়-২ আসনে এবার ভোটযুদ্ধ শুধু আওয়ামী লীগ বনাম বিরোধী নয়—বরং হিন্দু ভোটারদের মন কে জিতবে সেই প্রশ্নেই মূল লড়াই। একদিকে জামায়াত তাদের অতীত সহানুভূতির দৃষ্টান্ত তুলে ধরে সমর্থন চাইছে, অন্যদিকে বিএনপি তার সাংগঠনিক শক্তি ও ধারাবাহিক উপস্থিতির মাধ্যমে এই ভোটব্যাংক টানতে চাইছে। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই স্পষ্ট হচ্ছে—এই নির্বাচনের ফল নির্ধারণ করবেন বোদা-দেবীগঞ্জের হিন্দু ভোটাররাই।

Nema komentara