দ্বীনি অনুভূতিতে আঘাত ও ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমের বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। পবিত্র কুরআনকে কেন্দ্র করে দেওয়া তার বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে এই আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) দৈনিক আল ইহসান পত্রিকার প্রতিবেদক মুহম্মদ আরিফুর রহমানের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শেখ ওমর রেজিস্টার্ড ডাকের মাধ্যমে নোটিশটি পাঠান। এ তথ্যটি নিজেই গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন আইনজীবী শেখ ওমর।
নোটিশে বলা হয়, গত ৬ অক্টোবর ইউটিউব চ্যানেল ‘চরমোনাই দর্পণ’-এ প্রকাশিত এক ভিডিও ক্লিপে দেখা যায় যে, ইসলামী আন্দোলনের শীর্ষ নেতা ফয়জুল করিম কুরআন সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করেন। ভিডিওতে তিনি বলেন, “শুধু কুরআন কিচ্ছু না” এবং “শুধু কুরআন কুরআন, এর মধ্যে শুভঙ্করের ফাঁকি।”
নোটিশে আরও উল্লেখ করা হয়, এ ধরনের বক্তব্য ইসলাম ও মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে গভীর আঘাত হেনেছে এবং পবিত্র কুরআনের মর্যাদাকে অবমাননা করেছে। কুরআন মুসলমানদের জীবনের সর্বাঙ্গীন দিকনির্দেশনামূলক এক পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ, যার প্রতি অবমাননাকর মন্তব্য করা বাংলাদেশের সংবিধান ও দণ্ডবিধি অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ।
আইনজীবী শেখ ওমর নোটিশে উল্লেখ করেছেন, ফয়জুল করিমকে তিন দিনের মধ্যে তার ওই মন্তব্যের জন্য প্রকাশ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে এবং বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে এমন ধর্ম অবমাননাকর মন্তব্য না করারও লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।
নোটিশে আরও সতর্ক করা হয়েছে যে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তিনি যদি ক্ষমা না চান বা মন্তব্য প্রত্যাহার না করেন, তবে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ঘটনায় দেশের বিভিন্ন ধর্মীয় মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই মন্তব্য করেছেন, ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত করার বিষয়টি কোনোভাবেই সহনীয় নয়। অনেকে দ্রুত আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
ধর্মীয় বিশ্লেষকরা বলছেন, যেকোনো ধর্মীয় প্রতীক বা পবিত্র গ্রন্থ নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য সমাজে বিভাজন তৈরি করে এবং উসকানিমূলক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। তাই দায়িত্বশীল নেতাদের বক্তব্য প্রদানের সময় আরও সচেতন হওয়া উচিত।
ফয়জুল করিমের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে আইনি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তা দণ্ডবিধি অনুযায়ী গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
এই ঘটনার পর রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অঙ্গনে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে—নেতাদের বক্তব্য, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং ধর্মীয় অনুভূতির ভারসাম্য রক্ষার বিষয়ে নানা আলোচনাও শুরু হয়েছে।