ইউটিউবে কুরআন অবমাননাকর মন্তব্যের অভিযোগে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তিন দিনের মধ্যে মন্তব্য প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত ক্ষমা না চাইলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
পবিত্র কুরআনুল কারীম সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্যের অভিযোগে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমের বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।
এই নোটিশটি পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শেখ ওমর, দৈনিক আল ইহসান পত্রিকার প্রতিবেদক মুহম্মদ আরিফুর রহমানের পক্ষে। বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) রেজিস্টার্ড ডাকের মাধ্যমে এ নোটিশ পাঠানো হয় বলে নিশ্চিত করেছেন আইনজীবী নিজেই।
নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ৬ অক্টোবর ইউটিউব চ্যানেল ‘চরমোনাই দর্পণ’-এ প্রকাশিত একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, ইসলামী আন্দোলনের শীর্ষ নেতা সৈয়দ ফয়জুল করিম প্রকাশ্যে পবিত্র কুরআন সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। ওই ভিডিওতে তিনি বলেন, “শুধু কুরআন কিচ্ছু না” এবং “শুধু কুরআন কুরআন, এর মধ্যে শুভঙ্করের ফাঁকি।”
এই বক্তব্যকে ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’ ও ‘কুরআনের মর্যাদা হানিকর’ হিসেবে উল্লেখ করে নোটিশে বলা হয়েছে—পবিত্র কুরআন এমন এক দিকনির্দেশনামূলক গ্রন্থ, যা ইসলাম ধর্মের পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থার নির্দেশনা দেয়। কুরআনের প্রতি কোনো ধরনের অবমাননাকর মন্তব্য বাংলাদেশ সংবিধান ও দণ্ডবিধি অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধের শামিল।
নোটিশে আরও বলা হয়, সৈয়দ ফয়জুল করিমের এই মন্তব্য মুসলিম উম্মাহর বিশ্বাস, ধর্মীয় অনুভূতি ও সামাজিক স্থিতিশীলতার ওপর সরাসরি আঘাত হেনেছে। তাই তাকে আগামী তিন দিনের মধ্যে সুস্পষ্টভাবে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে প্রকাশ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ ধরনের মন্তব্য না করার প্রতিশ্রুতিও দিতে হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
অন্যথায়, তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনের আওতায় মামলা দায়েরসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সতর্ক করা হয়েছে।
আইনজীবী শেখ ওমর বলেন, “পবিত্র কুরআন নিয়ে এমন মন্তব্য কোনোভাবেই সহ্য করা যায় না। এটি শুধু ধর্মীয় অবমাননা নয়, বরং দেশের প্রচলিত আইনেরও লঙ্ঘন। আমরা চাই, তিনি দ্রুত তার মন্তব্য প্রত্যাহার করে মুসলমানদের কাছে ক্ষমা চান।”
এরই মধ্যে ঘটনাটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকেই ভিডিওটি শেয়ার করে ফয়জুল করিমের শাস্তির দাবি জানাচ্ছেন। কেউ কেউ বলছেন, একজন ধর্মীয় নেতার মুখ থেকে এমন মন্তব্য আসা অত্যন্ত দুঃখজনক।
অন্যদিকে, ইসলামী আন্দোলনের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন এবং প্রয়োজনে আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা বা প্রতিক্রিয়া জানানো হতে পারে।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত সংক্রান্ত অভিযোগে বাংলাদেশে এর আগেও একাধিক ব্যক্তি ও সংগঠনের বিরুদ্ধে মামলা ও আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ধর্মীয় বিষয়ে দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য শুধু আইনি নয়, সামাজিকভাবেও বড় ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।
এই প্রেক্ষাপটে, ফয়জুল করিমের বক্তব্য ও তার বিরুদ্ধে পাঠানো আইনি নোটিশ নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই বিষয়টি কোন দিকে মোড় নেয়, তা এখন সময়ের অপেক্ষা।