close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

কুমিল্লার সেই ভিডিও সামাজিক মাধ্যম থেকে সরাতে হাইকোর্টের নির্দেশ..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
কুমিল্লায় ধর্ষণ ভিডিও ভাইরাল—হাইকোর্ট ২৪ ঘণ্টায় সরাতে নির্দেশ দিল। গ্রেফতার মূল অভিযুক্ত, তদন্তে গতি আনতে নির্দেশনা। আলোচিত ঘটনায় উত্তাল দেশ।..

কুমিল্লার মুরাদনগরে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে এক নারীকে ধর্ষণের ঘটনাটি দেশের সামাজিক ও ডিজিটাল পরিমণ্ডলে তীব্র আলোড়ন তুলেছে। সেই ভয়াবহ ঘটনার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় আজ হাইকোর্ট কড়া নির্দেশ দিয়েছে— ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে সরাতে হবে

বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরবিচারপতি সৈয়দ জাহেদ মনসুর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই নির্দেশনা দেন। আদালত বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)-কে ভিডিও সরানোর দায়িত্ব দিয়েছে। এ ছাড়া, ভুক্তভোগী নারীর নিরাপত্তা, চিকিৎসা ও মানসিক সাপোর্ট নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ঘটনার পরপরই আইনজীবী মীর এ কে এম নুরুন্নবী একটি রিট আবেদন দাখিল করেন। সেই রিটের ভিত্তিতেই হাইকোর্ট আজ এই গুরুত্বপূর্ণ আদেশ দেয়। আদালত জানায়, ১৪ জুলাইয়ের মধ্যে মামলার তদন্ত অগ্রগতি জানাতে হবে, এবং সেই দিন মামলাটি আদেশের জন্য তালিকাভুক্ত থাকবে।

সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে আলোচিত এ ঘটনায় ইতোমধ্যে মূল অভিযুক্ত ফজর আলী-কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রবিবার ভোর ৫টার দিকে ঢাকা সায়েদাবাদ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

ফজর আলী কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাহেরচর পাচকিত্তা গ্রামের শহীদ মিয়ার ছেলে। ভিডিওটি ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় অনিক, সুমন, রমজান এবং বাবু নামের চারজনকে আগেই গ্রেফতার করা হয়েছে।

তথ্যানুসারে, ভুক্তভোগী নারী ১৫ দিন আগে স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। সেই সময় মুরাদনগরের এক বাড়িতে দরজা ভেঙে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ।

পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খান জানান, ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক ক্ষোভ ও প্রতিবাদ তৈরি হয়। বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে, এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাতে থাকেন সাধারণ মানুষ।

বিচারপতিরা বলেন, এই ধরনের স্পর্শকাতর এবং জঘন্য ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া অপরাধকে উৎসাহিত করে, এবং ভুক্তভোগীর মানসিক ও সামাজিক ক্ষতি হয়। এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ নিশ্চিত করা হবে, এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজরদারি আরও জোরদার করতে হবে।

এই ঘটনার পর সমাজে প্রশ্ন উঠেছে— একজন নারী কীভাবে দিনের আলোয় নিজের ঘরে এতটা অনিরাপদ হতে পারেন? কেন এমন ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার সাহস পায় কিছু মানুষ? পুলিশের ভূমিকা, সমাজের নৈতিক অবক্ষয় এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দায়িত্বশীলতা নিয়ে চলেছে বিস্তর আলোচনা।

এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করলো, নারীর নিরাপত্তা এখনও অনেকাংশে ঝুঁকিপূর্ণ, বিশেষত ঘরের মধ্যেও। হাইকোর্টের হস্তক্ষেপ জনসচেতনতা ও ন্যায়বিচারের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এখন সময় এসেছে—আইন, প্রযুক্তি ও সামাজিক দায়িত্ববোধ একসঙ্গে কাজ করুক, যেন এমন হৃদয়বিদারক ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর না ঘটে।

No comments found