close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের টাকায় বিএনপিসহ সব দলের রাজনৈতিক কার্যক্রম চলছে: হাসনাত আব্দুল্লাহ..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
কুমিল্লায় রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন সৃষ্টি করলেন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি বললেন, ‘আওয়ামী লীগের অর্থায়নে বিএনপিসহ সব দল চলছে’ এবং নির্বাচন-অন্যায় নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তোলেন..

কুমিল্লায় রাজনৈতিক কার্যক্রম চলছে আওয়ামী লীগের টাকায়, দায়ী কারা?

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ কুমিল্লায় এক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সমাবেশে সরব হন। শুক্রবার (১৬ মে) শহরের আহত-শহীদ ও বীর সন্তানদের সম্মানে আয়োজিত জুলাই সমাবেশে তিনি বলেন, "৫ আগস্টের আগে যেভাবে আওয়ামী লীগ ঘোরাঘুরি করতো, এখনো করছে। এটা আমাদেরও, বিশেষ করে আসিফ নজরুল স্যারেরও ব্যর্থতা।"

তিনি বলেন, দেশের বিচার বিভাগে অনেকে কেন জামিন পাচ্ছে, বিশেষ করে যারা আওয়ামী লীগের লোক, সেটা খতিয়ে দেখতে হবে। আর দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল কেন আরম্ভ হচ্ছে না, সেটাও স্পষ্ট করতে হবে। তিনি জাতির কাছে দাবি জানান, এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট অবস্থান নিক এবং যদি কেউ পারছেন না কাজ করতে, তবে সেটাও খুলে বলুন।

রাজনৈতিক দলগুলো আওয়ামী লীগের অর্থায়নে

হাসনাত আব্দুল্লাহ আরও বলেন, "কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলায় বিএনপি সহ সকল রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে আওয়ামী লীগের অর্থায়নে।" তার এই মন্তব্য কুমিল্লার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এক দারুণ বিস্ফোরক দাবি হিসেবে দেখা হচ্ছে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, আওয়ামী লীগের অর্থনৈতিক ভিত্তি ঠিক থাকলে কোনও ভালো নির্বাচন সম্ভব নয়। তিনি দাবি করেন, আওয়ামী লীগের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা উচিত।

এছাড়াও তিনি বলেন, শুধু আওয়ামী লীগ নয়, জাপাসহ ১৪ দল সরকারের রাজনৈতিক চিন্তা কী তা পরিষ্কার করতে হবে। তিনি বলেন, "আমরা রাস্তায় নামার আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। তবু মনে হয় তারা নিজ উদ্যোগে কিছু করছে না।"

ছাত্র আন্দোলন ও আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে পরামর্শ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের উদ্দেশ্য করে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, অনেক বৈষম্যবিরোধী তরুণ এখন তদবির বাণিজ্যে লিপ্ত, যা তাদের কাজ নয়। তিনি বলেন, "আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি আমাদের সাহায্য চায়, আমরা করব, কিন্তু তাদের কাজে ইন্টারফেয়ার করা যাবেনা।" এছাড়া তিনি আহতদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে ও সংস্কারের পক্ষে কাজ করতে আহ্বান জানান।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দাবি

এনসিপির নেতা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বিশেষ আর্জি জানান, আগামী ২৬ দিনের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করতে হবে। তিনি বলেন, যদি আশা-আকাঙ্ক্ষার সঠিক প্রতিফলন না হয়, তবে আবার রাস্তায় নামা ছাড়া বিকল্প থাকবে না। তিনি কুমিল্লা বিভাগের দাবি জোরদার করে বলেন, "আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং অন্তর্বর্তী সরকার কুমিল্লাকে বিভাগ হিসেবে ঘোষণা করবে, এটা আশা করছি।"

নির্বাচন ও বিচার নিয়ে প্রস্তাবনা

হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, নির্বাচনের পূর্বে নির্বাচন কমিশনকে সংস্কার করতে হবে। তিনি প্রশ্ন তুলেন, যারা নির্বাচন করতে চায়, তাদের সশরীরে উপস্থিতির বাধা কোথায়? তাই নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সশরীরে হাজির হওয়ার বিধান রাখতে হবে।

তিনি আরো বলেন, "আমরা যখন দিচ্ছি, তখন উজাড় করে দিচ্ছি, কিন্তু কিছুই পাচ্ছি না। যদি আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসে, কুমিল্লাকে আলাদা স্টেট করা হবে, কারণ কুমিল্লা ছিল হাসিনা ও তার বাবার দুঃস্বপ্ন।"

সমাবেশে অন্যদের বক্তব্য

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব নাভিদ নওরোজ শাহ, জয়নাল আবেদীন শিশির, শহীদ সাদমানের মা কাজী শারমিন, শহীদ ইমাম হাসানের ভাই রবিউল আউয়াল, ড. ফয়জুল ইসলাম, ইস্টার্ন মেডিক্যাল কলেজের পরিচালক শাহ মো. সেলিম, শহীদ রবিনের মা পারভীন আক্তার, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আশিকুর রহমান ওয়াসিম, সাংবাদিক শাহাজাদা এমরান প্রমুখ।

শহীদ পরিবারকে সম্মাননা ও কুশল বিনিময়

জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং কুশল বিনিময় করেও অনুষ্ঠানের আকার পূর্ণ হয়। শহীদদের স্মরণে এই আয়োজন স্থানীয় রাজনৈতিক মহল এবং সাধারণ মানুষের কাছে গভীর আবেগ জাগিয়ে তোলে।


হাসনাত আব্দুল্লাহর স্পষ্ট ভাষণ কুমিল্লার রাজনৈতিক অঙ্গনে এক নতুন আলো ফেলে দিয়েছে। তার দাবির মধ্যে রয়েছে বিচার, নির্বাচনের স্বচ্ছতা, রাজনৈতিক দলগুলোর অর্থায়ন নিয়ে প্রশ্ন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা নিয়ে স্পষ্ট দাবি। কুমিল্লার ভবিষ্যৎ নিয়ে এই সমাবেশে উঠে এসেছে গভীর রাজনৈতিক চিত্র, যা দেশের বৃহত্তর রাজনীতিতেও প্রতিধ্বনিত হবে।

コメントがありません