close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

কুড়িগ্রামের প্রথম শহীদ মিনার অবহেলায় পড়েছে, ইতিহাস জানে না শিক্ষার্থীরা

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুটি শহীদ মিনারই কলেজের জমিতে অবস্থিত। তবে, নতুন শহীদ মিনারেই সব অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। মাতৃভাষা দিবসে কলেজ কর্তৃপক্ষ জেলার প্রথম শহীদ
কুড়িগ্রামের মোল্লাপাড়া এলাকায় অবস্থিত জেলা শহরের প্রথম শহীদ মিনারটি দীর্ঘদিন ধরে অবহেলা ও অযত্নের শিকার। শহীদ মিনারের প্রাঙ্গণ এবং তার আশপাশের এলাকায় ময়লার স্তূপ জমে আছে, এবং মূল বেদির পেছনে মূত্র বিসর্জন ও নেশাজাতীয় দ্রব্যের বোতল পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। শহীদ মিনারের পাদদেশে কিছু শিক্ষার্থী ধূমপান করছিলেন। এমন চিত্র গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কুড়িগ্রামের প্রথম শহীদ মিনারের। এটি জেলার প্রথম শহীদ মিনার হলেও অযত্ন ও অবহেলার কারণে এর গুরুত্ব হারিয়েছে। তবে এটি শহরের ইতিহাসের একটি অমূল্য অংশ, যা অনেক শিক্ষার্থীর কাছে অজানা। কুড়িগ্রাম পৌর শহরের মোল্লাপাড়া এলাকায় কুড়িগ্রাম-ভূরুঙ্গামারী সড়কের পাশে মজিদা আদর্শ ডিগ্রি কলেজের প্রবেশপথে অবস্থিত এই শহীদ মিনারটি। কলেজ প্রাঙ্গণের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে আরও একটি শহীদ মিনার রয়েছে, যেখানে প্রতি বছর ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানানো হয়। কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুটি শহীদ মিনারই কলেজের জমিতে অবস্থিত। তবে, নতুন শহীদ মিনারেই সব অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। মাতৃভাষা দিবসে কলেজ কর্তৃপক্ষ জেলার প্রথম শহীদ মিনারেও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। কুড়িগ্রামের প্রথম শহীদ মিনারের ইতিহাস জানা যায় ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে। ওই দিন ঢাকা শহরে পুলিশের গুলিতে ভাষাশহীদদের হত্যাকাণ্ডের খবর কুড়িগ্রামে ছড়িয়ে পড়লে, পরদিন ২২ ফেব্রুয়ারি কুড়িগ্রাম হাই ইংলিশ স্কুল এবং মাইনর স্কুলের শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করেন। মিছিলে অংশ নেয়া একজন, সামিউল হক (৮৬), কুড়িগ্রাম রিভার ভিউ হাই স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। সামিউল হক বলেন, ‘আমরা কয়েকজন শিক্ষার্থী আলোচনা করে কুড়িগ্রাম শহরের ১ নম্বর স্কুলে মিলাদ মাহফিল ও আলোচনা সভার আয়োজন করি। কিন্তু পুলিশ আমাদের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করে। পরবর্তীতে, ১৯৫৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি কুড়িগ্রাম-ভূরুঙ্গামারী সড়কসংলগ্ন খেলার মাঠে কাদামাটি দিয়ে প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। ২০ ফেব্রুয়ারি পুলিশ সেই মিনার ভেঙে দেয়। তবে শিক্ষার্থীরা আবারও শহীদ মিনারটি নির্মাণ করেন। পরদিন কুড়িগ্রাম শহরের মানুষরা সেই শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানান।’ ১৯৫৬ সালে শহীদ মিনারটি ইট-সিমেন্ট দিয়ে নির্মিত হয়, কিন্তু ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী সেটি ধ্বংস করে। স্বাধীনতার পর আবারও শহীদ মিনারটি নির্মিত হয় এবং বর্তমানে এটি মজিদা আদর্শ ডিগ্রি কলেজের মধ্যে অবস্থিত। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় শহীদ মিনারটি যথাযথ সম্মান পায় না। একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা জানতাম না আমাদের কলেজে জেলার প্রথম শহীদ মিনার রয়েছে।’ মজিদা আদর্শ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবেদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কলেজের ক্যাম্পাসে আরও একটি শহীদ মিনার রয়েছে, তাই পুরোনো শহীদ মিনারটি কিছুটা উপেক্ষিত হয়ে যায়। তবে আগামী বছর থেকে আমরা ২১ ফেব্রুয়ারির র‍্যালি ও আলোচনা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শহীদ মিনারের ইতিহাস জানাব।’ এই শহীদ মিনারটি কুড়িগ্রামের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেও, বর্তমান প্রজন্মের কাছে এর ইতিহাস অজানা। তাই, এটি সংরক্ষণ ও সঠিকভাবে প্রদর্শন করার জন্য প্রাসঙ্গিক উদ্যোগ নেওয়ার সময় এসেছে।
Geen reacties gevonden


News Card Generator