close
ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!
কুয়েটে প্রথম হামলা: ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে সহিংস সংঘর্ষে আহত ৩০ জন!


খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) ক্যাম্পাসে গতকাল সংঘর্ষের ঘটনায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রদলের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষের পর কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছেন। এই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এবং বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে। সংঘর্ষের মূল কারণ ছিল ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা এবং হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা।
ঘটনার শুরু ও পাল্টাপাল্টি অভিযোগ:
ক্যাম্পাসের সেন্ট্রাল মসজিদের সামনে প্রথমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করে। তারা স্লোগান দেয়, ‘ছাত্ররাজনীতির ঠিকানা, এই কুয়েটে হবে না’ এবং ‘রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস চাই’। এই সময় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা তাঁদের প্রতিবাদে স্লোগান দেন ‘ভুয়া ভুয়া’। এর পরেই উত্তেজনা বাড়ে এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। প্রথমে বৈষম্যবিরোধীদের আক্রমণের অভিযোগ জানালেও, ছাত্রদলের পক্ষ থেকে পাল্টা আক্রমণের অভিযোগ করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংঘর্ষের রূপ নেওয়া পরিস্থিতি:
কুয়েট ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অংশে এবং আশপাশের এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্রদলের নেতারা দাবী করেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা প্রথমে তাঁদের মিছিল থেকে আক্রমণ করেন। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, ছাত্রদলের সদস্যরা তাদের স্লোগান দেওয়া মিছিলে প্রথম আক্রমণ করেন এবং তারা তাঁদের ওপর ইটপাটকেল, রামদা ও বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়।
আহতদের চিকিৎসা ও পরিস্থিতির অবনতি:
সংঘর্ষের ফলে আহত শিক্ষার্থীদের দ্রুত খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুয়েট মেডিকেল সেন্টার এবং আশপাশের বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন হাসপাতালের সামনে অ্যাম্বুলেন্সে আহত শিক্ষার্থীদের নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখা গেছে। সংঘর্ষের পরেও আশপাশের এলাকার পরিস্থিতি উত্তপ্ত ছিল এবং আহতদের চিকিৎসা দেওয়ার কাজ অব্যাহত ছিল।
কুয়েটে ছাত্রদলের কার্যক্রম নিয়ে উত্তেজনা:
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, কয়েক দিন ধরেই কুয়েট শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রদলের কমিটি গঠন নিয়ে আলোচনা চলছিল। এরই প্রেক্ষিতে গতকাল ছাত্রদল ক্যাম্পাসে লিফলেট বিতরণ করে এবং তাদের কর্মসূচি চালিয়ে যায়। এ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং ছাত্রদলের সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে থাকে।
অভিযুক্ত পক্ষের অভিযোগ:
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক নেতা জানান, ‘গতকাল ছাত্রদল ক্যাম্পাসের বাইরে ফরম বিতরণ করছিল। এই প্রক্রিয়ায় আমরা তাদের প্রতিবাদ জানাতে প্রস্তুত ছিলাম, কিন্তু আমাদের প্রতিবাদ আন্দোলনকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য ছাত্রদল এবং তাদের সহযোগী কিছু বাহিনী এসে আমাদের ওপর আক্রমণ চালায়। আমাদের একাধিক নেতা আহত হন।’
শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি:
উপাচার্যের কাছে তাঁদের অভিযোগের আবেদন জানানোর উদ্দেশ্যে ক্যাম্পাসে জমায়েত হওয়ার পর ছাত্রদলের সদস্যরা আবারও হামলা চালান। এই ঘটনার পর, কুয়েটের প্রশাসন থেকে পুরো পরিস্থিতি সম্পর্কে তদন্ত শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবি, ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের ব্যবস্থা নেওয়া হোক, যাতে ভবিষ্যতে এমন সহিংসতা না ঘটে।
কুয়েট ক্যাম্পাসের ভবিষ্যত কি?
কুয়েটে ঘটিত এই সহিংসতার পর ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, ভবিষ্যতে এমন সহিংসতা রোধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কী পদক্ষেপ নেবে। ছাত্ররা বলছেন, তারা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের দাবি আদায় করতে চান, কিন্তু সহিংসতার মাধ্যমে তাদের আন্দোলনকে ভিন্নভাবে দেখা হচ্ছে।
এ ঘটনা, কেবল কুয়েট ক্যাম্পাসের জন্য নয়, দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতির ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
לא נמצאו הערות